অভিনেত্রী সমাদৃতাকে এখন সবাই চেনে অভিনয়ের জন্য। সমাদৃতা পালের দমদম ক্যান্টনমেন্টে বড় হয়ে ওঠা। বাবা অমরকান্তি পাল। মা পুতুল পাল। আর পাঁচজন মেয়ের মতই মেয়েবেলা শুরু লেখাপড়া দিয়েই। দমদম গার্লস স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডি পেরিয়ে মতিঝিল গার্লস হাই স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত। কলেজের সীমানা ছাড়িয়ে গাঁটছড়া বাঁধা রবীন্দ্রনাথের গানের সঙ্গে। কারণ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাদৃতা স্নাতকোত্তরের পাঠ নিয়েছিল রবীন্দ্রসঙ্গীতে। অথচ এই সমাদৃতা থিয়েটারের মঞ্চ চিনেছিল ‘উহিনী’ কলকাতা নামক নাট্যদলের মাধ্যমে। এই দলে তথাগত চৌধুরীর নির্দেশনায় “লাস্ট লোকাল ” নাটকে তার প্রথম মঞ্চাবতরণ। আসলে “লাস্ট লোকাল” নাটকটা তার থিয়েটার জীবনের “ফার্স্ট লোকাল” হলেও পরবর্তীতে থিয়েটারের পথে তার যাত্রা চলেছে অপ্রতিহত গতিতে। একসময় সমাদৃতার মনে হয়েছিল সমস্ত রকম শিল্পের মিশ্রণ হল থিয়েটার। তাই থিয়েটারের পথে সে হয়ে উঠল অক্লান্ত এক যাত্রী। শুধু অভিনয় নয়, সে মনে করে কোন একটা নাট্যদলে যুক্ত থাকলে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে থিয়েটারের এবং দলের সবরকম কাজে যুক্ত থাকতে হয়। দলের শিল্পীদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার পাশাপাশি একটা নাটক নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আলো, আবহ, রূপসজ্জা, মঞ্চ উপকরণ ইত্যাদি সব কিছুর সাথে যুক্ত থাকা প্রয়োজন। সমাদৃতা তাই একজন পরিপূর্ণ অভিনেত্রী।
আসলে থিয়েটারকে ভালবাসার ক্ষেত্রে আর একটা কারণ আছে। রবীন্দ্রভারতীতে রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে পড়াশুনোয় যুক্ত থাকলেও পাস পেপারে ছিল নাটক। স্বভাবতই রবীন্দ্র গানের পাশাপাশি নাটক নিয়ে কিছুটা পাঠ তো নিতেই হয়েছিল। আর মিনার্ভা রেপার্টারি কর্মশালাতেও যুক্ত ছিল সমাদৃতা। বেশ কয়েকজন নির্দেশকের নির্দেশনায় থিয়েটার করার অভিজ্ঞতা তার জীবনের ঝুলিতে রয়েছে। স্বপ্নদীপ সেনগুপ্ত, তথাগত চৌধুরী, প্রীতম চক্রবর্তী, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, দেবাশিস রায়, প্রবীর গুহ, শুভদীপ গুহ, প্রদীপ মজুমদার, দেবব্রত দাস, পৌলমী বসু, তুলিকা দাস, দেবাশিস বিশ্বাস, নাইজেল আকারা, শ্রমণ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ নির্দেশকের অধীনে কাজ করতে করতে থিয়েটারের খুঁটিনাটি শিখেছে সমাদৃতা পাল। করোনার বিপর্যয়ের কালে তবু নতুন করে ভাবতে বসেছিল সে। এই বিপর্যয়ে থিয়েটারজীবীদের প্রচুর ক্ষতি হয়েছিল। দু-দুটো বছর থিয়েটারের চর্চাও প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। থিয়েটারকে রুটিরুজি করে যারা বাঁচতে চেয়েছিল তারা মানসিকভাবে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। তবু অবস্থা বদলাতেই অন্যদের মত সমাদৃতাও আবার জোরকদমে নেমে পড়েছে থিয়েটারের মঞ্চে। কারণ থিয়েটার নিয়েই থাকতে চায় সমাদৃতা। থিয়েটার তাকে যেমন অদ্ভুত শক্তি দেয়, তেমনই আনন্দও দেয়। যা আর অন্য কোন কিছুর মধ্যে পাওয়া যায় না বলে তার ধারণা। পারিশ্রমিক নিয়ে যেমন বহুদিন বহু প্রযোজনায় সে অভিনয় করছে, তেমনই এখন ভূমিসূত থিয়েটার দলের সাংগঠনিক অনেক দায়িত্ব তাকে সামাল দিতে হয়। দলের জন্যই BanglaNatok.Com এ যুক্ত থেকে দলকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে সে।
অনেক নাটকের অনেক চরিত্রে অভিনয় করে নিজের জাত চিনিয়েছে সমাদৃতা। তবে ভূমিসূত থিয়েটারের প্রযোজনা “চর্যাপদের কবি ” নাটকে ডোম্বীর চরিত্র তার প্রিয় চরিত্রের তালিকায়। অভিনয়ের পাশাপাশি গান, ক্রাফটিং সহ প্রকল্পভিত্তিক একটা কাজের সঙ্গেও নিজেকে যুক্ত রেখেছে সে। সমাদৃতার ইচ্ছা করে, আগামীতে থিয়েটারের আলো, আবহের কাজটাও ভাল করে শিখে নেওয়া। সবই আসলে নিজের দল আর অভিনয়ের তাগিদে। ভূমিসূত থিয়েটারের নির্দেশক স্বপ্নদীপ সেনগুপ্তকেই জীবনের সঙ্গী হিসাবে বেছে নিয়েছে। হয়তো সেটাও থিয়েটারকে ভালবেসেই। থিয়েটারকে ভালবাসা থেকেই থিয়েটারের মানুষকে ভালবেসে জীবনের গাঁটছড়া বেঁধে নিয়েছে। স্বপ্নদীপ তো পাশে আছেই, কিন্তু সমাদৃতার দিদিও তাকে থিয়েটারে প্রেরণা জুগিয়েছে । মা, বাবা সহ স্বপ্নদীপের পরিবার এখন তার থিয়েটারের ক্ষেত্রে প্রাণিত শক্তি অবশ্যই।
ভূমিসূত থিয়েটারের সমাদৃতা পালের অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকগুলি হল : চর্যাপদের কবি, শিকার, project Manhattan, বুলন্দ, আমি – উপেন (নির্দেশক স্বপ্নদীপ সেনগুপ্ত), লাস্ট লোকাল ( নির্দেশক তথাগত চৌধুরী) অমলের চিঠি (নির্দেশক প্রীতম চক্রবর্তী), চৌমাথা (নির্দেশক অনির্বাণ ভট্টাচার্য) হৃদিপাশ, হট্টমেলার পারে, আবার দেখা হবে (নির্দেশক দেবাশিস রায়), তিতাস একটি নদীর নাম, কোয়েশ্চেন্স মার্ক (নির্দেশক প্রবীর গুহ), আমার কিছু কথা ছিল (নির্দেশক প্রদীপ মজুমদার), চাঁদের গায়ে, কুড়নো পাঁচালী, কালসাপ, গুপ্তধন (নির্দেশক দেবব্রত দাস), ঘটক বিদায় (নির্দেশক পৌলমী বসু) , চতুর্থীর জোড় (নির্দেশক তুলিকা দাস) , জলছবি (নির্দেশক দেবাশিস বিশ্বাস) , ঝরা ফুলের রূপকথা (নির্দেশক নাইজেল আকারা), বুকঝিম এক ভালবাসা (নির্দেশক শ্রমণ চট্টোপাধ্যায়), সূর্যতোরণ (নির্দেশক দেবাশিস দত্ত) ইত্যাদি। এছাড়া “উজান পাড়ি” নাটকটি সমাদৃতার নির্দেশনা। “লাস্ট লোকাল” ধরে যে সমাদৃতার থিয়েটারে যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেই সমাদৃতা এখন বাংলা থিয়েটারে যথার্থই দর্শক আদৃতা এক অভিনেত্রী।
অনেক ধন্যবাদ বিজয় দা ও অমল আলো – কে, আরো দীর্ঘ হোক আমাদের সবার পথ চলা।। নাটক চলতে থাকুক আবার ও থার্ড বেল এর অপেক্ষায় আমরা এক হই।।
Darun Protibedon. Samadrita tumi eta deserve koro. Onek onek subhecha janalam.
ভাল থাকিস। কাজে থাকিস।
Proud of you dear ♥️ you are one of my inspiration god bless you, May your future days be brighter
খুব ভালো কাজ হচ্ছে বিজয়দা, মানুষকে কিভাবে জোর করে পড়াব বুঝতে পারছি না। যাদের পরিচয় করাচ্ছ তারাও খুলে নিজেরা পড়ে কি?
জানিনা।