এক তরুণ রাজার জন্য শোকগাথা | বিজয়কুমার দাস

থিয়েটারের সাম্রাজ্য ছেড়ে কেন গেলে রাজা? কত কথা হল সেদিন দুজনে।সব কথাই ছিল থিয়েটার নিয়ে। নিজের থিয়েটার যাপনের কথা বলতে গিয়ে তারুণ্যের টগবগে আনন্দে যেন ছটফট করছিলে সেদিন। তোমাকে নিয়ে অমল আলোয় লিখব বলে ফোন করেছিলাম।অমল আলোর অভি চক্রবর্তী বলেছিল, তোমাকে নিয়ে লিখতে। যেসব তথ্য সেদিন দিলে দূরভাষে দীর্ঘ কথোপকথনে, এত সহজে তার সবটাই স্মৃতি হয়ে গেল!

কলকাতার সঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগণার বাসন্তী থানার চুনাখালী গ্রামের দূরত্ব তো কম কিছু নয়। কিন্তু থিয়েটারের টানে তুমি সেই দূরত্ব কমিয়ে ফেলেছিলে। বাবা, দাদা তো যাত্রা জগতের মানুষ।আর তুমি হয়ে গেলে থিয়েটারের জগতের বাসিন্দা। শিক্ষাবিজ্ঞানের স্নাতক হলেও ছোট থেকেই টান ছিল থিয়েটারে। কালীনগরের দীপক নায়েকের টানে এসে দাঁড়িয়েছিলে থিয়েটারের অঙ্গনে। কলেজে পড়তে পড়তেই চাকরিও জুটে গিয়েছিল।কিন্তু তাই বলে থিয়েটার ছাড়োনি।

সংসার,চাকরি সবকিছু সামাল দিয়ে থিয়েটারের মহড়া, নানা চরিত্র হয়ে মঞ্চে নামার মধ্যে একটা অন্য জীবনের স্বাদ খুঁজে নিয়েছিলে। আসলে থিয়েটার ব্যাপারটা এমনই। যাকে জড়িয়ে ধরে তাকে ভালবাসার নারীর মতই জড়িয়ে ধরে। যারা থিয়েটার করে, তারা সবকিছু সামাল দিয়েই থিয়েটার করে। যারা করে তারাই জানে, থিয়েটারের টান কী অপ্রতিরোধ্য টান। সেই টানে তুমিও বাইক চালিয়ে ছুটতে হয়তো চাকরির দায়িত্ব শেষে এক নাটকের মহড়া থেকে আর এক নাটকের মহড়ায়।

সকুলে “ঝালাপালা” নাটক দিয়ে শুরু হওয়া থিয়েটারের জীবনটা তোমাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়িয়েছে সব কাজের মাঝেও। সংসার ছিল। চাকরি ছিল।পাশাপাশি থিয়েটারও ছিল। কিন্তু হঠাৎই ফেসবুক আচমকা সেই তোমাকে নিয়ে মারাত্মক দু:সংবাদ ছড়িয়ে দিল যেদিন, সেদিন সমগ্র থিয়েটারের দুনিয়া তোমার জন্য বেদনায় মর্মাহত হল। এভাবে অসময়ে সব ছেড়ে চলে গেলে! তোমার জীবন নাটকের পাণ্ডুলিপিতে এমন একটা দৃশ্য কি কোথাও লেখা ছিল?…আসলে এখানেই আমরা সবাই অসহায়। নাটকের পান্ডুলিপিতে প্রস্থান কখন তা জানা থাকলেও জীবন-নাটকের পাণ্ডুলিপিতে প্রস্থান কখন তা কেউ জানতে পারে না।তুমিও জানতে না। তাই আচমকা দুর্ঘটনা এবং অকাল প্রস্থান।

পিছনে পড়ে রইল কালীনগর ঐকতান, তোমার অভিনীত নানা চরিত্রের স্মৃতি, অগস্ত বোয়ালের ফোরাম থিয়েটার, দীপক নায়েক কিংবা ড: সঞ্জয় গাঙ্গুলির সান্নিধ্য আর তোমার সুখের সংসার।
আমার চলভাষে তোমার পাঠানো জীবনের কথাগুলো কেমন ঝাপসা মনে হচ্ছিল।কানে বাজছিল দূরভাষে তোমার তারুণ্যদীপ্ত কণ্ঠস্বর।

সেই সব স্মৃতি নিয়ে এই অক্ষরমালা সাজালাম আবার অমল আলোর জন্য। কিন্তু নির্মম সত্য এই যে, এই অক্ষরমালা পড়ে তুমি তো আর ফোন করবে না……