শেষ অংশ
সাতটি পর্বের নাটক ‘টিনের তলোয়ার’, দৃশ্য শব্দটির এখানে কোথাও উল্লেখ নেই। বেনীমাধব এ নাটকে মুখ্য চরিত্র। এ নাটকে যখন অভিনয় চলে তখন থিয়েটারের মধ্যে অভিনীত হতে থাকে আর এক থিয়েটার — ‘ময়ূরবাহন’ নাটক। থিয়েটারের ফ্রেমবদ্ধ আর এক থিয়েটার। বেনীমাধব নিজেকে বাংলার গ্যারিক বলে দাবী করত সে উচ্ছৃঙ্খল , স্বার্থপর, অভিমানী, দাম্ভিক, চতুর, মদ্যপ, উদার, শিক্ষক। গিরিশচন্দ্রের মতো বেনী আগে যাত্রার দলে গান গাইত। থিয়েটারওয়ালা বেনীমাধবের থিয়েটারের কর্তব্য কর্মে কোনো গাফিলতি নেই। উৎপল দত্ত যেমন তাঁর সারাজীবনের নাট্যকর্মে শেক্সপিয়র, মধুসূদন ও গিরিশচন্দ্রকে গুরু বলে মেনেছেন, বেনীমাধবও তেমনি সেভাবে এখানে উপস্থাপিত। গিরিশচন্দ্র যেমন নটী বিনোদিনীকে বাংলামঞ্চের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করে থিয়েটারের স্বার্থে তাকে জনৈক গুর্মুখ রায়ের রক্ষিতা হতে বাধ্য করেছিলেন, বেনীমাধবও তেমনি সমাজের অনগ্রসর অর্থনৈতিক শ্রেণীর থেকে ময়নাকে তুলে এনে থিয়েটার বাঁচাবার দায়ে তাকে বীরকৃষ্ণ দাঁ এর মতো লম্পট, ব্যভিচারীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন। জীবনের রুক্ষ কঠিন বাস্তব ভূমিতে দাঁড়িয়ে বেনীমাধবকে এই সমঝোতা করতে হয়েছে। কিন্তু বেনীমাধবের মনে স্বদেশী চিন্তাচেতনার প্রতি অনুরাগ ছিল গোপনে। তাই প্রিয়নাথের দেশপ্রেমকে তিনি শ্রদ্ধা করতেন আর এই শ্রদ্ধা প্রকাশিত হয়েছে নাটকের শেষ অংশটিতে সুস্পষ্ট ভাবে। ইংরেজ তোষামুদে বেনীমাধবের তুলনায় থিয়েটারপ্রেমী জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ বেনীমাধবের সত্তা এখানে প্রকাশিত। বেনীমাধব– ‘সধবার একাদশী’ নিমচাঁদ চরিত্রে অভিনয় করে আবার কখনও হয়ে ওঠে বিদ্রোহী কৃষক, তিতুমীর। তিতুমীরের চরিত্রে অভিনয় করতে করতে বেনীমাধব আত্মরূপে প্রকাশিত হয় মঞ্চে। এই সব চরিত্রগুলিই কিন্তু নিঃসঙ্গ, একা, বিদ্রোহী। বেনীমাধব তো নিজের সম্পর্কে বলেছে— ‘আসলে আমি বড় একা। কেউই কখনো পাশে নেই। দেবতার মতন একা। অভিশাপের মতন, অবজ্ঞার মতন একা।’ থিয়েটারের মধ্যে নাট্যবোধে রঙ্গরসিকতায় অভিনয়ের শৃঙ্খলায় এক যুগ থেকে আরেক যুগে, এক চরিত্র থেকে আর এক চরিত্রে সঞ্চরণে সিরিয়াস ভাবনার বৃত্তে মিলেমিশে এই চরিত্রটি বাংলা নাটক তথা থিয়েটারের উজ্জ্বল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। এই নাটকে উৎপল দত্ত রিভলভিং স্টেজ ব্যবহার করেছিলেন। ‘টিনের তলোয়ার’ নব্য বঙ্গের সংস্কৃতিতে উদ্জীবিত প্রিয়নাথ মল্লিক। হিন্দু কলেজের পেন্ডেল সাহেবের কাছে তার নাটক নিয়ে শিক্ষাগ্রহণ। পার্কস্ট্রীটের সাঁ সুসি থিয়েটারে ইংরেজিতে অভিনয় করেছে প্রিয়নাথ। সে সোনার বেনে, লোহা ব্যবসায়ীর সন্তান কিন্তু বাবু সমাজের বিকৃত চিন্তা ভাবনায় উদ্বুদ্ধ নয়। পিতার উচ্ছৃঙ্খল আচরণ, নারীবিলাসকে প্রিয়নাথ ঘৃণা করে। সে ইংরেজি কথোপকথনে পারঙ্গম , ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থায় জাতীয়তাবাদী নাটক লিখে অভিনয় করাতে আগ্রহী। প্রিয়নাথের ‘পলাশীর যুদ্ধ’, ‘তিতুমীর’ শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদী নাটক। ময়নার মধ্যে প্রিয়নাথ সৃজনশীল একটি সত্তা খুঁজে পায়। প্রিয়নাথের ভালবাসায় কোনো খাদ ছিল না, তাই বীরকৃষ্ণের বাঁদী হিসেবে ময়নার জীবনযাত্রা তার কাছে ময়নার প্রতিভার অপমৃত্যু মনে হয়েছে। প্রিয়নাথ আর উৎপল দত্ত দুজনেই ডিরোজিও ভাবনায় উদ্দীপিত। দুজনেই সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী, ঔপনিবেশিকতা বিরোধী, দুজনেই বাংলার নাট্য সমাজকে রিফর্মড করতে চেয়েছিলেন।
উনিশ শতকের নাটকে নারীদের অবস্থান কেমন ছিল— সে সম্পর্কে উৎপল দত্তের যথেষ্ট ধারণা ছিল। এদের সুযোগ্য উত্তরাধিকারী প্রফুল্লবালা, নিভাননীদেবী বা প্রভাদেবীর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে উৎপল দত্ত খবর রাখতেন। তাঁর এই নাট্য অভিজ্ঞতা ময়না চরিত্র নির্মাণে যথেষ্ট সাহায্য করেছে। ময়না সবজি বিক্রেতা। তারপর সে মঞ্চের জনআদরিনী নায়িকা আর নাটকের পরিণতিতে মুৎসুদ্দী বেনিয়ার অর্দ্ধশায়িনী রক্ষিতা, দারিদ্র্য থাকলেও সবজিওয়ালীর জীবনে সে ছিল সম্পূর্ণ স্বাধীন। রবীন্দ্রনাথের ‘দুই বিঘা জমি’র উপেন এবং ‘টিনের তলোয়ার’ এর ময়না দুই ছিন্নমূল মানুষ। উপেনকে নিয়ে রচিত হয় খাজা মহম্মদ আব্বাসের ‘দো বিঘা জামিন’ আর ময়নাকে নিয়ে ‘টিনের তলোয়ার’। ময়না অত্যন্ত ভাইব্রান্ট , অার এনার্জেটিক চরিত্র। সপ্রতিভ, সুকণ্ঠী, আত্মসম্মানে ভয়পুর। তাই বেনীমাধবের শিক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টায় সুঅভিনেত্রী হয়ে উঠলেও বীরকৃষ্ণ দাঁ এর রক্ষিতা হয়ে উঠতে তার অন্তরের অন্তস্থল থেকে তীব্র প্রতিবাদী আর্তনাদ নির্গত হয়। কিন্তু সুখ্যাত অভিনেত্রী হয়ে উঠে সৃষ্টি হয় তার অস্তিত্বের সংকট। ময়নার পক্ষে আর রাজপথে সবজি ফেরি করার পুরনো পেশায় ফেরা দুষ্কর। থিয়েটারকে ভালবেসে সে প্রিয়নাথের সঙ্গেও ঘর বাঁধতে চায় না। শেষ পর্যন্ত নিজেকে প্রবোধ দেয়– ভাবতে পারে থিয়েটারের জন্য নিজেকে বিক্রি করেছে সে। প্রিয়নাথকে ভুলতে না পেরে বীরকৃষ্ণের কাছে মার খায় ময়না। থিয়েটার অন্ত প্রাণ ময়না বেনীমাধব যখন মঞ্চে ‘সধবার একাদশী’র ‘নিমচাঁদ’ থেকে ‘তিতুমীর’ এ পরিবর্তিত হয় তখন সে ঐ নাটকের ‘বঙ্গলক্ষ্মীর’ গান ধরে, নায়িকা শঙ্করীর মুক্তি ঘটে বঙ্গলক্ষ্মীর ব্রতকথায়।
সর্বংসহা ধরিত্রীর মতো এ নাটকে সকলের দুঃখকষ্ট ব্যথাযন্ত্রণার দায় ভার বহন করে নিয়ে চলে আরেক অভিনেত্রী বসুন্ধরা। সে মধ্য বয়স্ক, গ্রেট বেঙ্গল অপেরার নাট্য সংসারের সর্বময় কর্ত্রী। অভিনেত্রী গোলাপসুন্দরী বসুন্ধরার আদর্শ। দলকে সবরকম বিপদ থেকে রক্ষা করার ঝুঁকি নিতে পারে অনায়াসে। গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটারে অভিনেত্রী হিসাবে অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফীর কাছে তার নাট্যশিক্ষা। দক্ষ অভিনেত্রী বসুন্ধরা ময়নাকে মেজে ঘষে আধুনিক ভাষায় যাকে বলে grooming এর ভার নিয়ে ময়নাকে মঞ্চের উপযুক্ত করে তুলতে চেয়েছিল। ময়নার মধ্যে বসুন্ধরা নিজের অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষার পরিপূর্ণ হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল। থিয়েটার তার প্রাণ। বসুন্ধরা এককালে পতিতার জীবন থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য আঁকড়ে ধরে ছিল থিয়েটার। আর তাই বেনীমাধব থিয়েটারের স্বার্থে ময়নাকে বীরকৃষ্ণ দাঁ এর রক্ষিতা করতে চাইলে দুঃখে, বেদনায় বসুন্ধরার অন্তর বিদীর্ণ হয়। ময়না তথা অভিনেত্রী শঙ্করী বেনীমাধব ও বসুন্ধরার যুগ্ম সৃষ্টি। অমৃতলাল বসু, অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফি ও বেনীমাধবের সঙ্গে দীর্ঘদিন অভিনয় করে বসুন্ধরার নাট্যবোধ ছিল পরিণত। বীরকৃষ্ণ দাঁ যখন প্রিয়নাথের নাটক বন্ধ করতে চান তখন প্রথম প্রতিবাদ করেছিল বসুন্ধরা। কেননা প্রিয়নাথের লেখা নাটকের গুরুত্ব সে বুঝেছিল। ‘তিতুমীর’ বন্ধ হলে সখা, সচিব, গুরু বেনীমাধবকে প্রত্যাখ্যান করে বসুন্ধরা বলে— ‘এ প্রসাদ নেবো না, তোমাকে আর পুজোও করব না কোনোদিন,’ এ শুধু অভিনেত্রীর ক্ষুব্ধ অভিব্যক্তি নয় সামাজিক অন্যায় ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতি কঠিন প্রতিবাদ। মঞ্চে নাটকের শেষে তিতুমীর নাটকের একটি চরিত্র হিসেবে বসুন্ধরা বলে— ‘যুদ্ধ শুরু হতেই পালাচ্ছিল বীর পুঙ্গব। রুখে দাঁড়ালেই পালায় ঐ কাপুরুষের দল’। বসুন্ধরা এই নাটকের শেষে হয়ে উঠেছেন কঠিন ইস্পাত যে ‘টিনের তলোয়ার’-কে উন্মুক্ত, শাণিত তরবারিতে পরিণত করতে উৎসুক।
এই নাটকে বীরকৃষ্ণ দাঁয়ের নারী ও সুরায় আসক্তি, বৃটিশ তোষণ, পয়সার দেমাক, অশিক্ষিত দম্ভ উনিশ শতকের বাবু সংস্কৃতির প্রতিফলন। সে ‘সধবার একাদশী’কে বলেছে ‘বাজে নাটক’, ‘সধবার হবিষ্যি’, ‘বিধবার একাদশী’। তিনজন রক্ষিতা রেখেও তাঁর সামাজিক সম্মান অটুট নয়। ‘নীলদর্পণ’এর কারণে মূলত অভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন জারী হয়েছে তাহলে ঐ একই নাট্যকারের লেখা ‘সধবার একাদশী’র মতো নৃত্য গীতহীন সিরিয়াস নাটক অভিনয় হওয়া উচিত নয় বলে তার দৃঢ় সিদ্ধান্ত। গ্রেট বেঙ্গল অপেরার স্বত্বাধিকারী বীরকৃষ্ণ দাঁ বেনিয়া মুৎসুদ্দি, বিপুল ঐশ্বর্যের অধিকারী, দু’ হাতে দশটা হীরের আংটির যে কোন একটির বিনিময়ে ‘সাহিত্য-ফাহিত্য’ কিনে নিতে চায়। আবার নারীসঙ্গ সুখের তীব্র ইচ্ছায় ময়না ওরফে শঙ্করীকে কিনে নিতে থিয়েটারের স্বত্ব বেনীমাধবকে বেচে দিতে দ্বিধা করে না। সুরার প্রতি তার তীব্র আকর্ষণ। ইংরেজ তোষণ তার চরিত্রের আর একটি বৈশিষ্ট্য। ইংরেজের সঙ্গে তার ব্যবসা। থিয়েটারও তার ব্যবসা। প্রথমটি মুখ্য, দ্বিতীয়টি গৌণ। তবে রক্ষিতা খুঁজে পাওয়া যায় বলে দ্বিতীয় ব্যবসাটিতেও সে সমান আগ্রহী। এমনকি বিকৃতকাম বীরকৃষ্ণ ময়নার মতো রক্ষিতাদের শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করতেও পিছপা হয় না। উনিশ শতকের ক্ষয়িষ্ণু সামন্ত্রতন্ত্রের প্রেক্ষাপটের প্রামাণ্য প্রতিনিধি বীরকৃষ্ণ দাঁ।
উনিশ শতকের সমাজ চিত্রের খুঁটি নাটি তীব্রভাবে প্রতিফলিত হয়েছে এ নাটকে। উনিশ শতকের নাট্যশালায় অভিনেতা ও অভিনেত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক, মঞ্চ শিল্পীদের সঙ্গে তৎকালীন সমাজের দেনাপাওনার খতিয়ান, নাট্যশিল্পীদের সঙ্গে দর্শকের ভাব ভালবাসা, রাষ্ট্র ও নাট্যশালার শোষক ও শোষিতের সম্পর্ক সবই প্রকট হয়েছে এ নাটকে। অনেক সমালোচক বলে থাকেন যে এ নাটকে দু’একটি কালানৌচিত্য দোষ চোখে পড়ে। ময়নার সংলাপে ‘রিজিয়া’ নাটকের অভিনয়ের কথা উল্লেখ আছে। ‘রিজিয়া’ নাটকের প্রথম অভিনয় হয় ১৯০৩ সালে। গ্রেট বেঙ্গল অপেরার মহলা কক্ষে ‘ভানুমতী চিত্তবিলাস’ ও ‘রামাভিষেক’ নাটকের পোস্টার দেখানো হয়েছে। কিন্তু ১৮৭৬ সালের অনেক আগে এ ধরণের নাটক অভিনয় বন্ধ হয়ে যায়। ১৮৭২ সালে বাগবাজার অঞ্চলে কিছু মধ্যবিত্ত যুবককে কেন্দ্র করে শুরু হয় মধ্যবিত্ত বাঙালির থিয়েটার করার স্বপ্ন। সেই স্বপ্নের মধ্যে তীব্র বাধা ও নানা ঘাত – প্রতিঘাত ছিল। এই নাটকে আছে সেই বাধার নানা রূপ ও স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করার আশার প্রতিফলন। ইতিহাস ও কল্পনা মিলেমিশে একাকার হয়ে সৃষ্টি হয়েছে এই গৌরবময় নাট্য।
কথায় বলে – কলম তরবারির চেয়ে ধারালো আর শক্তিশালী। উৎপল দত্ত ধারালো কলমে এই নাটকে শাণিত তরবারির সৃষ্টি করেছেন। নাটকে টিনের তলোয়ারের কথা উল্লেখিত হয়েছে অনেকবার। কাশ্মীরের যুবরাজ ময়ূরবাহনের জীবন ট্র্যাজেডিতে পরিপূর্ণ। এই নাটকে ময়ূরবাহনের কোমরে ঝোলে টিনের তলোয়ার। টিনের তলোয়ারের প্রতি মথুরের তাচ্ছিল্য প্রকাশিত হয়েছে তার সংলাপে, তাছাড়া দি গ্রেট বেঙ্গল অপেরায় মহলাকক্ষে টিনের তলোয়ার ঝুলিয়ে রাখা হয়। এমনকি প্রতিবেশীরা মহলাকক্ষে ইঁট পাটকেট ছুঁড়লে মহলাকক্ষের মানুষগুলি তলোয়ারের অনুষঙ্গে ঢাল দিয়ে আত্মরক্ষা করে। বাচস্পতির লোকজন এদের উপর চড়াও হলে টিনের তলোয়ার বাগিয়ে নাট্য দলের লোকজন তাড়া করে। এই নাটকের শেষটুকু বদলে যায় তিতুমীর ও ওয়াহাবি আন্দোলনের কথায়। টিনের তলোয়ার হয়ে ওঠে প্রতিবাদে মুখর, শাণিত তরবারির মতো তীক্ষ্ম। বেনীমাধব নিমচাঁদের সংলাপ থেকে মঞ্চে চলে যান তিতুমীরের কথায় — ‘যতক্ষণ এক ফিরিঙ্গি শয়তান দেশের পবিত্র বুকে পা রেইখে দাঁড়ায়ে থাকবে, ততক্ষণ এই ওয়াহাবি তিতুমীরের তলোয়ার কোষবদ্ধ হবে না কখনো।’ মাওয়ারকে ভূপতিত করে তিতুমীরবেশী বেনীমাধব বলে ওঠেন— ‘তলোয়ার চালাচ্ছেন, জলদ ভূপতিত এই নাও ইংরাজ দুশমন। এই নাও নারী ধর্ষক ইংরাজ হার্মাদ। আজ বছরের পর বছর আমার দেশরে যা দিয়েছ, এই নাও তার খানিক ফেরৎ নাও।’ এইভাবে সামান্য টিনের তলোয়ার নাটকের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ঝকমকে ইস্পাতের তলোয়ার হয়ে ওঠে।
‘টিনের তলোয়ারে’ উৎপল দত্ত বাংলা রঙ্গালয়ের সংগ্রামের ইতিহাসকে তুলে ধরেছেন। তীব্র কষ্ট আর যন্ত্রণা সহ্য করে, নানা বিরুদ্ধ শক্তির বিরুদ্ধে নিরন্তর সমঝোতা এবং সংগ্রাম করে বাংলা থিয়েটারের সূচনা পর্বের নাট্যব্যক্তিত্বরা যে দুর্গম পথে থিয়েটারের তীর্থযাত্রায় বার হয়েছিলেন তারই ফলশ্রুতিতে বাংলা থিয়েটার আজ যথাযোগ্য মর্যাদার আসনটি পেয়েছে। ‘টিনের তলোয়ার’ নাটকে উনিশ শতকের বাংলা থিয়েটারে পরিচয়টি স্বর্ণাক্ষরে মুদ্রিত। আর এই পরিচয় জ্ঞাপন করেছেন শতবর্ষ পরেকার আর এক স্মরণীয় নাট্যব্যক্তিত্ব উৎপল দত্ত।
তথ্যসূত্র :-
১/ টিনের তলোয়ার: উৎপল দত্ত
২/ গিরিশ নাট্য সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য– উৎপল দত্ত
৩/ ওঁরা, আমরা, এরা– শোভা সেন, থীমা, ২০০৮, পরিবর্ধিত সংস্করণ
৪/ টিনের তলোয়ার একটি ভাষ্য: কুন্তল মুখোপাধ্যায়, রত্নাবলী, প্রথম প্রকাশ, ফেব্রুয়ারি ২০০৮
৫/ উৎপল দত্ত জীবনও সৃষ্টি– অরূপ মুখোপাধ্যায়, ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট, ইন্ডিয়া, দ্বিতীয় পুর্ণমুদ্রণ, ২০১১
৬/ থিয়েটারওয়ালা উৎপল দত্ত— দর্শণ চৌধুরী, পরিবেশক পুস্তক বিপণি, ২০০৭
Кредитные карты всех банков