মানুষের ভাগ্যলিপি কি চিরকাল বিধাতাপুরুষই লিখে দেবে? নাকি মানুষের ভাগ্য মানুষ নিজে গড়তে পারবে? কি হবে?
ছোটবেলায় নীতিগল্পে পড়েছিলাম দশচক্রে ভগবানকেও বোকা বানানোর কাহিনি। এখানে বিধাতাপুরুষ নাটকের গল্পটা দেখতে সহজ, মজার হলেও মোটেই সরল নয়। কবি নাট্যকার মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের লেখা মানেই অ্যাবসার্ড কিছু থাকেই। যা কখনও সহজে সাধারণ মানুষের ধারণার বাইরে । এ নাটক শুরু থেকে শেষ অবধি হাসতে হাসতে মননে বিদ্ধ করে নাট্যকারের সুচারু কলম। তাই তাঁর নাটকের বিষয়গুলিই এমন আধুনিকতায় গাথা নাট্যকারের রচনাগুলি।
পুজো বিয়ে শ্রাদ্ধ করে একার সংসারে দিন কাটান এক ব্রাহ্মণ ভুবন। অলস মস্তিষ্কে তার সবসময় অন্যের অর্থ প্রতিপত্তির দিকে নজর। নিজের কিছু নেই বলে গামছায় শুয়েই স্বপ্ন দেখেন আর ভগবানকে দোষারোপ করেন। একদিন ভগবানকে পাগল ভেবে হেনস্থা করে ব্রাহ্মণ। ভগবান তাকে বিধাতা পরিচয় দিলেও ছাড়ে না। পরে বিধাতা তার মনের ইচ্ছে পূরণ করবে বলে কথা দিয়ে তবেই ছাড়া পায়। অনেক দিন ভালো মন্দ খাওয়া হয় না। তাই শীঘ্রই তার সময় পাল্টাতে চলেছে এই বলে অন্তর্ধান হয় ভগবান।
পরদিন সকালে জমিদারের লোক আসে ভুবনের কাছে। যথারীতি সকালে স্নান আহ্নিক সেরে পৌঁছে যায় জমিদারের বাড়ি।জমিদারের সন্তান হওয়াতে ব্রাহ্মণ ভোজনের বিশাল আয়োজন চলে সেখানে। পঞ্চব্যঞ্জন সমারোহে জমিদারের আতিথেয়তায় জমিদার গিন্নীর হাতের রান্না খেয়ে ব্রাহ্মণ তৃপ্ত হলেই জমিদারবাবু খুশি। ভগবানও তক্কে তক্কে থাকে কিভাবে ব্রাহ্মণকে জব্দ করা যায়! তাই ছোট্ট ব্যাঙের রূপ নিয়ে চাটনির বাটিতে লাফিয়ে পড়ে। জমিদারের বারণ স্বত্তেও ব্রাহ্মণ চুমুক দিয়ে ব্যাঙ সহ পুরো বাটির চাটনি খেয়ে ফেলে। ব্রাহ্মণকে জব্দ করতে গিয়ে নিজেই জব্দ হয়ে আটকে যায় পেটের ভেতরে।
লক্ষ্মী সরস্বতী শেষে শিবের কথারও অবাধ্য হয় ব্রাহ্মণ। বেশ মজাদার অভিনয় হয়ে ওঠে দৃশ্যপটের প্রযোজনাটি। নির্দেশক উৎসব রাউত নিজেও অভিনয় করেন বিধাতার চরিত্রে। মঞ্চ উপকরণ প্রায় নেই বললেই চলে। সাদামাটা আলোয় এবং গল্পের গতিতে প্রযোজনা হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। দর্শকের ভাবের ঘরে কখন যে হাসতে হাসতে অভিনয় গুণে ব্রাহ্মণ সিদ কেটে বসেছে তা কেউ বুঝতেও পারেনা। মুহুর্মুহু হাততালিতে ভরে ওঠে শিশির মঞ্চের ভর্তি দর্শকাসন। নাটক হয়ে ওঠে সার্থক। দৃশ্যপটের এই বিধাতাপুরুষ প্রযোজনাটির প্রথম অভিনয় হয়েছিল ৮ নভেম্বর ২০২১ বারুইপুর। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নাট্য আকাদেমি আয়োজিত একবিংশ নাট্যমেলায় শিশির মঞ্চে ৫ম শো অভিনীত হলো। প্রধান চরিত্রে উজ্জ্বল মন্ডলের ভুবন সার্থক রূপায়ণ। সন্দীপ কুমার দের জমিদার সেজে ওঠা বড় চমৎকার। পাশাপাশি ববিতা মন্ডলের জমিদার গিন্নির চরিত্রে বেশ মানানসই। এছাড়া অঞ্জন সিং এর সরকারমশাই, নন্দ চরিত্রে সুরেশ সরকার, লক্ষ্মী চরিত্রে পৃথা রায়চৌধুরী, সৌমী চ্যাটার্জীর সরস্বতী এবং সরোজ দের শিব সেজে ওঠা যথাযথ।
মঞ্চ পরিকল্পনা এবং নির্দেশনা উৎসব রাউৎ। আলোক পরিকল্পনা ও প্রক্ষেপণ কল্যাণ ঘোষ, আবহ পরিকল্পনা ও প্রক্ষেপণ উদ্ভাস রায়, পোশাক ও রূপসজ্জা শেখ ইসরাফিল, মঞ্চ অজিত দে।
১৯৭৯ তে মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের দশটি নাটক একত্রে প্রকাশিত গ্রন্থে বিধাতাপুরুষ নাটকটি এর আগে অনেকেই মঞ্চস্থ করেছেন তাদের মধ্যে তথ্য পাওয়া যেসব দল প্রযোজনা করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুতানটি ক্যানভাস, নির্দেশনা – শম্ভুনাথ ঠাকুর, প্রথম অভিনয় ২৬ শে আগষ্ট ২০১৭, বয়েজ ওন লাইব্রেরি হলে। শ্রীরামপুর ছাত্র সমিতির প্রযোজনায় ১০ জানুয়ারি ২০১৯ শ্রীরামপুর রবীন্দ্র ভবনে এই নাটকটি অ-বাস্তব নামে প্রযোজিত হয়েছে।
অসংখ্য ধন্যবাদ ” অমল আলো ” কে , একই সাথে ধন্যবাদ জানাই অসীম বাবু কে ।
এভাবেই আমাদের পাশে থাকুন , থিয়েটারের সাথে থাকুন ।।
আগ্রহ রইল দেখবার।