কত রঙ্গ দেখি কলকেতায় | নীলা বন্দ্যোপাধ্যায়

আগে যা ঘটেছিল

ননীমাধব শেওড়াফুলির বেশ্যাপল্লীতে নামে। নেমে বুঝতে পারে এদের সঙ্গে এখন কলকাতার বেশ্যাদের তফাত বিস্তর। অথচ কলকাতার চেয়ে প্রাচীন শহর এই শ্রীরামপুর। ননী যে বেশ্যার ঘরে যায় তার সোহাগে উত্তাপ পায়না। ননীগোপালের মাথায় সর্বক্ষণ তরুলতা, আর তরুর মনে সেই পাপের রাত। তরুর বাড়ির চাকরানি জানে সে রাতের কথা। সে এসে তরুকে এ বৈধব্য জীবন থেকে মুক্তির লোভ দেখায়। বলে আজ রাতে ননীমাধব আসবে। সে যেন অপেক্ষা করে গঙ্গার ধারে।

পর্ব – ১০ 

সেদিন দুপুরে বেশ গরম হাওয়া বইছিলো, হলকা ছিলো বাতাসে খুব। ঘাম তুলনামূলক ভাবে কম হচ্ছিলো। তবু ঘামতে ঘামতে এসে সবার আগে বনমালী চক্রবর্তীর বাড়ি কড়া নাড়ে কালীমতী। বনমালীর ফাইফরমাস খাটে যে সিড়িঙ্গেপানা লোকটা সে এসে দরজা খুলে দিল। কালীমতী লোকটাকে সরিয়ে ভেতরে ঢুকতে গেলে মোটে জায়গা ছাড়ে না হারামিটা। ওর গা ঘেঁষে কালী ভেতরে ঢুকবে এতেই ওর মজা। কালীমতীর এই গরমে মেজাজ ভালো ছিলো না। সিড়িঙ্গে লোকটার বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললো –

“আমাকে একবার ছোঁবার দাম জানিস? তুই কেন তোর বাবু বনমালীর ক্ষ্যামতা নেই আমার কাচে এক রাত কাটানোর। এর পরদিন থেকে আর এ ভুল করিচিস কি রাম দা দিয়ে কেটে রেকে দেব।”

কালীমতির দাপটে ভয় পেয়ে যায় লোকটি। আর বিরক্ত না করে সরে দাঁড়ায়। কালী খুব বাড়িয়েও বলেনি। হাড়কাটা গলি অথবা রামবাগানের চেয়ে কর্নওয়ালিস স্ট্রিটের এই গলিতে আজকাল পয়সাওয়ালা, অভিজাত লোকের যাতায়াত অনেক বেশি। কারণ অবশ্যই বিনোদিনীর ও পাড়ায় বাস। তাই কালীমতির মতো পাতি বেশ্যার কাছেও বাবু লোকেরাই আসে। আর এখন তো চন্দ্রবদন কালীমতীর বাঁধা বাবু। কালীমতী ঘরে ঢুকে জানলা কখানা খুলে দেয়। দেখে গরম হাওয়া বইছে। আবার বন্ধ করে ঘরের কোণে রাখা বিরাট জলের কুঁজোটার দিকে হাত বাড়িয়ে দেখে ফাঁকা। কালী ঘর থেকে বেরিয়ে কুঁজো হাতে পাতকুয়োর দিকে যায়। কপিকলে বাঁধা বালতি দিয়ে ঠান্ডা জল তুলে কুঁজোতে ঢালে। বালতি কাত করে আঁজলা ভরে খানিক জল খায়, চোখে মুখে ছিটোয়, ঘাড়ে বুকে জল বুলোয়। হঠাৎ মনে হয় থেকে কে যেন দেখছে। সোজা হয়ে তাকাতেই দেখে টগর গাছের আড়াল থেকে সিড়িঙ্গে লোকটা তাকিয়ে আছে। বুকের কাপড় খানিক সরিয়ে জল মাখছিল, মিনসের সে দিকেই নজর। কালী লোকটাকে দেখে ভাবে ওর নিজের কাজ খানিক করিয়ে নেওয়া যাক। এতো বড় কুঁজো নিয়ে সে একা যেতে পারবেনা। লোকটাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। লোকটা ল্যাজ নাড়া কুকুরের মতো কুঁই কুঁই করতে করতে হাজির হয়।

“এই ড্যাগরা, কুঁজোটা ঘরে রেখে একটু ঝাঁটা দে দিকি মহলা ঘরে।”

কথাগুলো বলার সময় আরও খানিক বুকের কাপড় আলগা করে কালীমতী। লোকটি বিনা বাক্যব্যয়ে কুঁজো নিয়ে ঘরে চলে যায়। একটু বুক দেখিয়ে যদি কালীমতীর নিজের কাজগুলো করিয়ে নেওয়া যায় ক্ষতি কী! বনমালী চক্রবর্তীর বিডন স্ট্রিটের এই বাড়ির নিচতলায় গিরিশ ঘোষরা ভাড়া নিয়েছে মহলার জন্য। গুর্মুখ রায়ের টাকায় নতুন থিয়েটার বাড়ি হচ্ছে তাতে দক্ষযজ্ঞ বই নামাবে গিরিশ ঘোষ, তারই তোরজোড় চলছে। কালী শুনেছে সে থিয়েটার বাড়ি শেষের পথে, বিনোদিনীর নিজের নামে নাকি হচ্ছে।

বিনোদিনী কদিন খুব মহারাণীর মতো মহলায় আসতো। দেমাকে মাটিতে পা পড়ছিলো না। হঠাৎ কি হলো কে জানে। দিন দশেক ধরে মহলায় আসেনা। অথচ বাড়িতেই রয়েছে। প্রায়ই ছাদে ঘুরে বেড়াতে দ্যাখে কালীমতী। কালীমতী কিন্তু রোজই মহলায় আসছে অথচ এ খবরটা কিছুতেই বের করতে পারছেনা। এদিকে খবরাখবর বের করার জন্যই চন্দ্রবদন তাকে এখেনে পাঠিয়েছে। নইলে নিজের মান খোয়াতে দিনের পর দিন কে মহলায় এসে বসে থাকে। এখেনে তার কাজটাই বা কী! হয়তো বিনোদিনী বা জগত্তারিনীর জল তেষ্টা পেল গেলাসখানা এগিয়ে দিলো কালী। হারমোনিয়াম এগিয়ে দিলো, আঁচল লুটোলে তা তুলে ধরলো, পানের খিলি সেজে দিলো, রেহারসালের ঘর খানা ধুয়ে মুছে দিলো, এমন টুকটাক কাজ আরকি। রাতে খদ্দের থাকে যেদিন পরদিন মহলায় এসে ঝিমোয় কালী। নয়ত জেগে বসে মহলা দেখে। কালীমোতি লেখা-পড়া জানেনা তাই ডায়লগের কিউ দিতে পারেনা। স্পষ্ট উচ্চারণে সংলাপও বলতে পারেনা। দেখতেও সে সুন্দর নয় একেবারেই। কিন্তু তার গানের গলা চমৎকার।

এক কালে কালী ভাবত একদিন বিনোদিনীর গুরুমা গঙ্গা বাঈজীর মতো তার কন্ঠ মঞ্চ কাঁপাবে। আজকাল আর সেসব কিছুই মাথায় আসেনা। থিয়েটারে খাটলে দুচার পয়সা পাওয়াও যায়। খদ্দের তো তেমন নেই। এক ওই চন্দ্রবদনের ভরসায় কদ্দিন থাকবে কালীমতী। এ জীবনে কত বাবু এলো গেলো, কেউ থির হলোনা। উপুরন্তু দুখানা মেয়ে পেটে দিয়ে গেলো। তাদের পোষো, খাওয়াও, যত্ন করো। পেটে এলে বিরক্ত লাগে কিন্তু জন্মালে কেমন মায়া পড়ে যায়। কালীমতীর মেয়ে দুখানা নিয়ে তাই হয়েছে। কিছুতেই অযত্নে ফেলে রাখতে পারেনা। বিশেষত ছোট মেয়ে তারাসুন্দরীকে। কোন বাবুর বীজে এ ফল জন্মেছে জানেনা সে। কিন্তু একদম তার মতো নয়। এ মেয়ের মধ্যে এই সাত আট বছর বয়সেই কি যেন আছে। শান্ত, স্থির, জেদী মেয়েটার নেকা পড়া করার খুব ঝোঁক। গানের গলাও ভারি মিঠে। রঙটা ততো ফর্সা নয়, পাকা আশুথ পাতার মতো, তাতেই রাস্তা,দিয়ে গেলে ভদ্দরনোকেরাও তাকিয়ে আদর করে। এসব দেখে কালীমোতি থির করেছে ছোটটাকে থ্যাটারে ঢোকাতেই হবে। বড়টাকে ঢোকালেও মন্দ হতো না। কিন্তু বড় মেয়েটা হয়েছে তারই মতো। রূপ, গুণ, বুদ্ধি তেমন নেই। কালীমতীর তবু গানের গলা আছে এ মেয়ের তাও নেই। ছোট মেয়েটার হয়েছে আশ্চর্য মিঠে গলা। কি চমৎকার ঠাকুরের গান গায়। ভেবেছিলো গঙ্গা বাঈজীর কাছে নাড়া বাঁধাবে। ভাতারখাগির পয়সার খাঁই যা। বিনোদিনীকে সময় পেলে ধরবে। গঙ্গা মাগী ওর বাড়িতেই থাকে যদি বলে ঢুকিয়ে দেয়। আর যদি মেয়েটাকে এই থ্যাটারে ভর্তি করে দিতে পারে বিনোদিনী।

অবিশ্যি বলবো ভাবলেই বলা হয়ে ওঠে না। ইদানীং বিনোদিনী তাদের মতো ছোটখাটো মানুষকে চিনতেই চায়না। অথচ এক পাড়ায় থাকে। কালীমতী তো এককালে বিনোদিনীর দিদমার ভাড়াটেও ছিলো। কিন্তু তাতে কী, থিয়েটারে তার মান ওই সিড়িঙ্গেপানা চাকরটার থেকেও কম। সমাজে বেবুশ্যের মান নেই, আর বেবুশ্যে কুলে কালীমতীর মান নেই। তাই হাজার অপমান সয়ে সয়ে কালী নির্লজ্জ হয়েছে, লোভী হয়েছে, বিবেক খুইয়েছে। কোনও খারাপ কাজ করতেই তার বুক কাঁপেনা আজকাল। কালী কেবল ছোট মেয়ে তারার মুখের দিকে চেয়ে থাকে, মেয়েটা একবার থিয়েটারে ঢুকুক, নাম করুক তারপর এই সব অপমানের উত্তর দেবে সে।

কিন্তু মান অপমান চুলোয় যাক চন্দ্রবদন এ কতা পই পই করে বলে দিয়েছে

“গিরিশ ঘোষ যে থ্যাটারে যাবে, কালী তুইও পোঁদে পোঁদে যাবি। আটার মতো লেগে থাকবি। সেখেনে কি ঘটছে খপর এনে দিবি আমায়”

কালী তাই করে যতটা পারে। মহলায় খুব কামাই নেই তার। চর বৃত্তির বদলে পয়সা পায়। কালীমতী কতটুকুই বা ভেতরের খবর পায়। সামান্য শুনলে তারওপর দ্বিগুণ রঙ চড়িয়ে চন্দ্রবদনকে বলে সে। যেদিন যত রঙ চড়ায় সেদিন তত বেশি পয়সা পায় কালী। চন্দ্রবদন ভাবখানা দেখায় গিরিশ, অমৃতলাল সবাই চৌপাট হয়ে কেবল সেই থাকবে বাংলার নাট্যাকাশে। যদিও কালী এতোদিনে খুব বুঝেছে ও মিনসে জেবনে থ্যাটার খুলতে পারবেনে। বাপের পয়সাই ধ্বংস করবে কেবল। তাতে কালীমতীর কিছু এসে যায়না পয়সা পেলেই হলো। কিন্তু বিনোদিনী কেন দশ দিন থ্যাটারে এলেনা সে খপরখানা কিছুতেই পাচ্ছেনা কালী। আজ যে করে হোক জানতে হবে। কালীমতী আসল খবর বের করার নানান ফিকির ভাঁজতে থাকে। কার থেকে যে জানতে পারবে বুঝতে পারেনা।

এসব মতলব ভাঁজতে দরজায় খুট করে আওয়াজ পায় কালীমতী। দেখে কাদম্বিনী নটি দরজা দিয়ে ঢুকছে। কালীমতী কাদম্বিনী দেখে কান এঁটো করে হাসে। কাদম্বিনী পাত্তা দেয়না। মহলা ঘরের এক কোণে পাতা ফরাসের দিকে তাকিয়ে বলে
” একি চাদর বিছনো নেই কেন! তাকিয়া কোতায়, আমি কি খালি গদিতে বসবো!”
কালীমতী তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ায়

” আর বলুনি দিদি বাইরে যা তাত, এই এয়েচি, এট্টুসখানি বেশ্রাম নিচ্ছিলুম, পাতলুম বলে।”

কাদম্বিনী কোনও জবাব দেয়না। কালীমতী ভয়ে আর কথা বাড়ায় না। মহলা ঘরের পাশে আরও চারখানি ঘর এরা নিয়েছে। সবকটা ঝাড় পোঁছ করতে হবে। সেসব ঘরে মহলাঘরের ভিতর দিয়েই যেতে হয়। এসব ঘরের একখানিতে অভিনেতারা বিশ্রাম করে, কোনও পরামর্শ থাকলে সে ঘরেই হয়। অপরটিতে মেয়েছেলেরা বিশ্রাম করে, কাপড় বদলায়। আর একটায় তবলা, হারমোনিয়াম, বেহালা আরও নানান বাজনা, বই পত্তর, নাটকের সরঞ্জাম সহ নানা মাল পত্তর থাকে। আর মহলা ঘরের ঠিক উলটো দিকের ঘরে গিরিশ ঘোষের ঘর। সেখেনে এই থিয়েটারের একেবারে ওপর দিকের বাবুরা আর বিনোদিনী ছাড়া কেউ যায়না। তবে কাদম্বিনী মাগীকে মাঝে মাঝে যেতে দেখেছে সে। অবিশ্যি সে ঘরে কালীমতীও যায়। ঝাঁটপাট দিতে। একখানি পালঙ্ক আছে, দেরাজ আছে। আর তেমন কিচু নেই। কালী সে ঘর থেকে ঝাঁট দিয়ে রোজ গাদা বিলিতি মদের বোতল বের করে। দু একটাতে তলানি পরে থাকলে কালীমতী লুকিয়ে রেখে দেয়। বাড়ি গিয়ে চুকচুক করে মারে। এসব বিলিতি খেলে গায়ে হাতের ব্যথা আর মনের ব্যথা একেবারে হাওয়া হয়ে যায়। কালীমতী তাড়াতাড়ি বাজনা ঘর থেকে ফরাসে পাতার সাদা চাদর আর তাকিয়া নিয়ে মহলাঘরে ফেরত আসে। দেখে কাদম্বিনী মহলাঘরে রাখা কাঠের একটা চেয়ারে বসে আছে। কালীকে বলে

“ঘর গুমোট হয়ে আছে জানলা খুলে দে”।
“খুলেছিনু বাইরে গরম হাওয়া বইছে, খড়খড়ির পাখিগুনো তুলেদি বরং?”

কাদম্বিনী আবার জবাব দেয়না। কালীমতী মনে মনে ভাবে মহা গুমোর মাগীর। এত কিসের গুমোর লা। আগে নায়িকা ছিলি তো ছিলি, এখুন তো বিনোদিনী তোকে সরিয়ে সে জায়গা নিয়েছে। মুখে অবশ্যি গলে পড়া ভাব করে বলে

” এক গেলাস জল দেব? এই কুয়ো থেকে তুলিচি। ঠান্ডা, দেবো?”

কাদম্বিনী ঘাড় নাড়ে। তারপর বলে

“চাদর পাতা হলে বাতি জ্বেলে দিস, আমি পাট দেকব”

ঘরখানা জানলা বন্ধ থাকায় অন্ধকার হয়েছিল। খড়খড়ির পাখি তুলতে ডোরাকাটা আলো এসে পড়ে মেঝেতে।
সে আলোয় বিরাট ঘরখানাকে রহস্যময় দেখায়। ঘরের কোণে রাখা শ্বেতপাথরের টেবিলে নগ্ন মেমসাহেবের মূর্তি। আসলে ওটা বাতিদান। কাদম্বিনী ঠিক টেবিলের কাছেই বসে কনুইখানা টেবিলে রেখে হাতের পাতায় মাথা দিয়ে বসে আছে। চাদর পাততে পাততে আড়চোখে সেদিকে চেয়ে কালী মনে মনে ভাবে মাগী তার বয়সিই হবে। অথচ এখনও কী আকর্ষণ চেহারার। কোথাও এতোটুকুও মেদ নেই। মহলায় আসে কিন্তু কারও সঙ্গে কথা কয়না এক গিরিশ ঘোষ ছাড়া। বিনোদিনীর গুমর কমনা তবে এ মাগীর চেয়ে নরম তরম। এর সঙে ভয়ে কতাই কওয়া যায়না। কালীমতী কাদম্বিনীর সামনে এক গ্লাস জল রাখে। তারপর তালপাতার পাখায় হাওয়া দিতে থাকে

” কাদম্বিনী বলে হাওয়া দিতে লাগবেনা। পাখাটা রেখে যাও নিজের কাজ করো”

আজ এ মাগীর সঙ্গে কথা বলতেই হবে কালীমতীর। তাই বলে

” দিদি আপনার গানের সঙে কোরাসে একটা গান গাইছি, একটা জায়গা তুলতে পারছিনা একটু দেকিয়ে দেবেন”

কাদম্বিনী খুব ঠান্ডা গলায় উত্তর দেয়
“ওটা আমার কাজ নয়। যিনি গান তোলাচ্চেন বলো”

কালীমতী আর কি নিয়ে কথা বাড়াবে ভেবে না পেয়ে নিজের কাজে অন্যঘরে যায়। কোথায় ভেবেছিলো ওই সিড়িঙ্গে ড্যাকরকে দিয়ে কাজগুলো করিয়ে নেবে আর উপায় নেই। মাগী সাত তাড়াতাড়ি এসে বসে রয়েছে, কি করতে কে জানে! কালী এসে ঘরদোর ঝাঁট দিয়ে মোছে, পানের বাটায় পান সাজে। গিরিশ বাবুর বিশ্রাম ঘর থেকে একটা ওভারহোল্ট রে হুয়িস্কির বোতল পায়। কি জাতের বিলিতি মদ না বুঝেই কাঁচা এক ঢোঁক মেরে দেয়। দারুণ খেতে। চন্দ্রবদন যে বিলিতি আনে তার চেয়ে ঢের ভালো। কিন্তু বেশি খেলে ধরা পড়ে যাবে। বাড়িতেও নেওয়া যাবেনা। অনেকখানি আছে। যদি এসে খোঁজে। আর চুমুক দেওয়ার সাহস পায়না। পানের বাটা থেকে একখানা লবঙ্গ নিয়ে মুখে পুরে মহলা ঘরে ফিরে এসে অবাক হয় কালীমতী!

ফিরে এসে দেখে কাদম্বিনী শ্বেতপাথরের টেবিলে রাখা বাতিদানটাকে ঘিরে ডায়লগ বলছে।

“নন্দি, কোন্ মুখে ফিরিব কৈলাসে ? আসিবার কালে নিষেধ করিল হর। মানা না মানিনু, বড় মুখে আইলাম পিত্রালয়ে ; ছিল সাধ, মিটাব বিবাদ, বিবাদ না মিটিবেরে কভু যত দিন রবে অভাগিনী। যারে নন্দি, ফিরে যা কৈলাসে, কহিস্ মহেশে, জন্মিলাম অপমান হেতু তাঁর। ছার প্রাণ আর না রাখিব, পোড়া মুখ আর না দেখাব, ছাড়িব এ পাপদেহ। নিবেদন কররে চরণে, বংশ অভিমানে
কত তাঁরে কহিয়াছি কটু ; আমি নারী-মহিমা কি বুঝিবারে পারি;”

একি এ সংলাপ বলছে কেন কাদম্বিনী! এতো সতীর সংলাপ, অথচ কাদম্বিনী করছে সতীর মা প্রসূতির পাট! কালীমতী আশ্চর্য হয়ে ব্যাপারখানা দরজার পাশে দাঁড়িয়ে দেখে। সে দেখে কাদম্বিনী একের পর এক সতীর ডায়লগ বলে চলেছে বাতিদান ঘিরে। আর এমন করে বলছে যেন বাতিদানের মেয়েছেলে তার বিরাট প্রতিপক্ষ। অনর্গল সংলাপ বলতে বলতে হঠাৎ কালীমতীর দিকে চোখ যায় কাদম্বিনীর। চুপ করে যায়। তারপর বলে
” কিছু বলবে!”
প্রত্যুত্তরে দুদিকে ঘাড় নাড়ে কালী। এরপর বিরক্ত কাদম্বিনী বলে
” তবে এখেনে দাঁড়িয়ে আচ কেন! যাও নিজের কাজে যাও!”

“তুমি সতীর পাট কচ্চ দিদি, বিনি আর করবেনে! তাই সে আসচেনা!”

কাদম্বিনী কোনও জবাব দেয়না জ্বলন্ত চোখে চেয়ে থাকে কালীমতীর দিকে। কালীমতী সে দৃষ্টিকে ডরায়না। এমন চোখ এ জীবনে কত দেখেছে। যেখানে ফরাস পাতা তার এক কোণে মেঝেতে বসে পড়লে। কাদম্বিনী কালীমতী ঔদ্ধত্যে অবাক হয়ে যায়! তারপর বলে

“চাকরিটি প্রিয় নয় বুজি তোর!”

কালীমতী স্থির গলায় জবাব দেয়

“প্রিয় বলেই তো করচি। থ্যাটারের চাগরি জরুরি নয় আমার কাচে, আমি খেতে পাবো। আর আমি তো তোমায় খারাপ কিচু বলিনি কো। এ বাংলায় সকলে জানে তুমি বিনির চেয়ে আগে এয়েচ থ্যাটারে। গোলাপসুন্দরী ছাড়া তোমার আগটিঙের ধারে কাচে এদ্দিন কেউ যেতে পারেনি কো। তুমি এতোদিন নায়িকার পাট করতে বিনি সে থ্যাটারে থাগলেও। তোমার সীতার বনবাসে সীতার রোল কে ভুলতে পেরেচে এ বাংলায়। তাই ভেবিচি তুমিই এ বইয়ে মেন পাট করচ। এইটে যদি আমার ঘাট হয় তবে করিচি”

একটানা কথাগুলো বলে কালী থামে। দেখে ও মেয়েমানুষ নজরই করচে না তার দিকে। বরং বাতিদানের গায়ের ন্যাংটো মেয়েছেলের বুকে খোঁপার কাঁটা খুলে ঘা মারছে। পাগল নাকি বুঝতে পারেনা কালী।
ন্যাশানাল থিয়েটার ভেঙে এই থিয়েটার নতুন করে তৈরি করছে গিরিশ ঘোষ, অমৃতলালরা। প্রতাপ চাঁদ জুহুরি ন্যাশানাল থিয়েটার কিনে নেওয়ার পর বেশ রমরমিয়ে চলছিলো। সেখেনেই ক্রমশ বিনোদিনীর বাড়বাড়ন্ত হয়। এই কাদম্বিনী, জগত্তারিনীদের সরিয়ে নিজে নায়িকা হয়ে বসেছে। কাদম্বিনীর নাম ডাক কম ছিলোনা। কিন্তু একথা অস্বীকার করতে পারবে যে বিনোদিনীর একার নামে যেমন টিকিট বিক্রি হয় তা এ পর্যন্ত এদের কারুর হয়নি।

কালীমতী আবারও কাদম্বিনীর দিকে চায়, দেখে বিড় বিড় করে পাট বলছে। কালী মনের ভাব বোঝার জন্য বললে

“পান সেজিছি, খাবে?”

আবার কোনও জবাব আসেনা। মাগীর দেমাকে মাটিতে পা পড়ে না। কালীমতী মনে মনে ভাবে এরা বোঝেনা আজ যা আছে কাল থাকবেনা। নেইও তো। তোর আছে সে দাপট! এখন বিনোদিনীর দিন। মেনে নে। দেখলি তো চোকের সামনে। বিনোদিনী মাত্তর দশ দিন কামাই করে কাশী গেছে বলে প্রতাপ চাঁদ তার ন্যাশানাল থিয়েটারে চাকরিটা খেয়ে নিলে। তাতে বিনি জব্দ হলে? গিরিশ বাবু এবং দল বল সহ বেরিয়ে এলো ন্যাশানাল থেকে। এই যে কাদম্বিনীর এতো যে দেমাক, সেও তো পিছু পিছু এলে। এখন প্রতাপ হাত কামড়াচ্ছে।

কালী পুকুরের কোথায় মাছ ঠিক জানে। সেখেনে ঢিল মারেনা। বরং সেখানে ফাতনা পেতে বসে থাকে যারা তাদের গাঁ ঘেষে চলে। মাছ ধরা পড়লে মাছের তেল পোঁটা তার ভাগ্যে জুটে যায়। এখন বিনি কোন জলে ডুবে খাবি খাচ্ছে কালী জানে। তার পয়সাতেই এতো লপচপানি, থ্যাটার বাড়ি হচ্ছে, এই মহলা কক্ষ নেওয়া হয়েছে। যদি কাদম্বিনী তার নামে নালিশও করে তবে বলে দেবে কাদম্বিনী বিনির পাট বলছিলো। তাতে কি হবে অবিশ্যি জানা নেই তার। ন্যাংটার নেই বাটপারের ভয়। বিনিরও এ দিন থাকবেনা। তখন আবার মাছ খুঁজে নিতে হবে এই যা। আর মেয়েটা থিয়েটারে ঢুকে গেলে তাকে পায় কে।

কালীমতী এসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে হৈ হৈ করে অনেকে ঢুকে পড়ে। কাদম্বিনী ঠায় বসে থাকে চেয়ারে। কালীমতী ওঠে। সকলকে জলটল দিতে হবে। মহলা ঘর থেকে বেরুতে গেলে কেউ পেছন থেকে ডাকে কালীকে

“কালীমতী শোনো একবারটি”

কালী পিছন ফিরে দেখে চেয়ে দ্যাখে চন্দ্রবদনের মোসাহেব ননীমাধব। কেমন যেন একটু অস্থির হয়ে রয়েছে।

কালীমতী অবাক হয়! ননীর সঙ্গে প্রায়ই থিয়েটারে দেখা হয়। কোনও দিনও একটা কথাও বলেনা। ভাবখানা এমন দেখায় যেন কত বড় কেউকেটা, অথচ এতোদিনেও একখানা পাট পায়নি। দেখতে শুনতে ভালো, অভিনয় জানে, লেখা পড়া জানে এরাই পাট পায়না। কালীর মতো মেয়েছেলেরা কোন ছাড়। তবে এ ড্যাকরার তবু গুমর যায়না। ডাকুক সাড়া দেবেনা এই সিদ্ধান্ত নেয় কালীমতী। ননীমাধব এবার কালীর কানের কাছে গিয়ে ফিস ফিস করে।

“বাইরে চল, দরকার আচে।”

“আমার সঙে তোমার কিসের দরকার শুনি”

ননী বিরক্ত হয়।
” আমার নয় চন্দ্রবাবু কাজ দিয়েছেন। বাইরে আয়”
কালীমতীর বাবু চন্দ্রবদন কাজ দিয়েছে অতয়েব ইচ্ছে থাকুক না থাকুক কালী ননীমাধবের সঙ্গে বাইরে যাবে বলে সদরের দিকে মুখ করা মহলা ঘরের দরজা খোলে। দরজা খুলেই সে আর ননীমাধব চমকে যায়! সামনে গিরিশবাবু, বিনোদিনীকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিনোদিনী বেশ অনেকদিন পর মহলায় এলো। মুখখানায় হাসি নেই, বেশ গম্ভীর। কালীমতী বিনোদিনীর দিকে চেয়ে হাসলে বিনোদিনী হাসেনা। গিরিশ চন্দ্র এখনই টেনে রয়েছে, কালী গায়ে মিষ্টি মদের গন্ধ পায় । তারমানে বোধহয় বিনির বাড়ি থেকেই এলো। গিরিশ বাবু এসেই হৈ হৈ শুরু করে।

“একি আমি নেই বলে কি মহলা শুরু হবেনা! এই তো নেপেন এসে গেচে। নাচের প্রাক্টিস তো করতে পারতে।”

কথা কখানা বলে গিরিশ ঘোষ ঘরের মাঝ দেওয়াল ঘেঁষে গদি পাতা নিচু চৌকিতে বসেন কখানা তাকিয়া নিয়ে। বিনোদিনী কাদম্বিনীর পাশের চেয়ারটি দখল করলে। দুজনের কেউই পরস্পরের সঙ্গে একটিও বাক্য বিনিময় করলে না। এতোক্ষণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে যে যার মতো আড্ডা মারছিলো। গিরিশ ঘোষকে দেখে সকলেই তঠস্থ হয়ে ওঠে। যে যার জায়গায় বসে। বাজনদাররা বাজনা ঘরে যায় নিজেদের যন্তর আনতে। কেবল ননীমাধব আর কালীমতী দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। মহলা শুরু হবে এইবারে। কদিন গিরিশ বাবুর দক্ষযজ্ঞ নাটকের মহলা চলছে। নতুন থিয়েটার বাড়ি খুললে ওই বই নামবে। বিনি সতী, কাদম্বিনী প্রসূতি আর স্বয়ং গিরিশ ঘোষ দক্ষ। এই একই নাটকের অভ্যেস রোজই করে অভিনেতারা, অভিনেত্রীরা। নিখুঁত না হলে ছাড়েন না গিরিশ বাবু। প্রথম কয়েকদিন খুব উৎসাহ নিয়ে দেখত কালীমতী। তারপর আর এক নাটক কাঁহাতক দেখা যায়। আজকাল কালী মহলা শুরু হয়ে গেলে একটু ঝিমিয়ে নেয়। কালীর এ নাটকে কোরাসে একটা গান আছে রোজ সে গানের অংশ আসেও না। ননীমাধবও রোজই এসে বসে থাকে। কেউ এখনও পাট দেয়নি ওকে। তাই ওদের দুজনেরই মহলা শুরু হলে তেমন কাজ নেই। ননীমাধব অস্থির হয়ে আছে আজ বড়। কালীকে তাড়া দেয়

” চল কথা আচে বলছিনা, দেরি করোনা।”

কালীমতী দাঁত চেপে প্রত্যুত্তর করে

” সবুর করো। মহলা শুরু হতে দাও। ঘোড়ায় জিন লাগগে এয়েচ নাকি!”

ওরা অপেক্ষা করে। গিরিশ ঘোষ বলেন
” দ্বিতীয় অঙ্কে ব্রহ্মা,আর নারদের অংশটুকু আগে হোক। বিনি অনেকদিন মহলায় আসেনি ও সতীর অংশটুকু দেখে নিক একবার। তারপর তৃতীয় গর্ভাঙ্কের সতী আর প্রসূতির অংশটুকুতে যাবো।”

গিরিশবাবু কথাগুলো বলার পর অনিচ্ছিতেই কালীমতীর চোখ চলে যায় কাদম্বিনীর দিকে। কালী দেখে কাদম্বিনী স্থির দৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। সে চাউনিতে কেমন যেন সাবধান লেগে রয়েছে। কালী আর দেখে না ওদিকে। মহলা শুরু হয়ে খানিক জমে গেলে ননীমাধব আবার কালীর কাছে এসে ফিসফিস করে বলে

” আর দেরি করোনা। বাইরে চল”

কালীমতী আর ননীমাধব মহলা ঘরের দরজা খুলে বেরোতে গেলে বাজখাঁই গলায় চিৎকার করে ওঠে স্বয়ং গিরিশ চন্দ্র।

“আঃ রিহার্সালের সময় কে ফিস ফিস করছে। কালীমতী! আর একটা কথা কইলে বের করে দেবো”

কালীমতী থতমত খেয়ে যায়। সে যতই ছোটলোক হোক। বিনা কারণে সকলের সামনে এ অপমানে কালী ব্যথা পায় মনে মনে। কালী বলে

” আজ্ঞে এই ননীমাধব বাইরে যেতে কইচে, আমি কথা কইনি বাবু”

ননীমাধবও কালীর কথায় অপ্রস্তুতে পড়ে। গিরিশচন্দ্র ননীমাধবকে বলে

” কি হে ছোকরা খুব তো থিয়েটারে পাট করার ইচ্ছে। এখেনে মনোযোগ, সময়ানুবর্তিতা, ডিসিপ্লিন – এসবের ভূমিকা অভিনেতা, নাট্যকারের চেয়ে কম নয়। আর তুমি মেয়েমানুষের টানে ছুটছো। কালীকে নিয়ে ফুর্তি করার সময় অনেক পাবে, এখন পাট শেখো”

ননীমাধব মাথা নিচু অবস্থায় বলে
“আজ্ঞে তা নয়। ওর সঙ্গে একটা দরকার ছিলো তাই। আর কখনো এমন হবে না।”
গিরিশের সামনে গড়গড়ায় অম্বুরি তামাক দিয়ে গড়্গড়াখানি বসিয়ে দিয়ে যায় বেন্দাবন বলে একটি ছেলে। সেও পাট পাবার আশায় বসে থাকে মহলায়। ছোঁড়া দেখতে শুনতেও খারাপ নয়। এদের থেকে ননীর অবস্থা ভালো এখেনে। ফাই ফরমাস খাটতে হয়না অন্তত। গিরিশ চন্দ্র ঘোষ ননী মাধবকে বলে

“যা হবার হয়েচে। পাট করতে চাও তো আজকের গোটা মহলা দেকো। এখেন থেকেই পাট বলাবো তোমায় আজ”

ননীমাধব নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেনা। গিরিশচন্দ্র ঘোষ স্বয়ং তাকে পাট বলাবে। কিন্তু আজ যে বড় সমস্যায় আছে ননীমাধব, আজ সে মহলায় থাকবে কী করে! আজ সে একা আসেনি ওর সঙ্গে তরুলতাও আছে। রাস্তার ও পারে দাঁড় করিয়ে রেখে কালীমতীকে ডাকতে এসেছিলো ননীমাধব মেয়েটাকে নিয়ে আজকের দিনটা রাখার জন্য। একটা বাড়ি ভাড়া খুঁজতেও তো সময় লাগে। আর আজকেই পাট বলার সুযোগ এলো তার তাও স্বয়ং গিরিশচন্দ্রের থেকে! কত দিন মহলায় এসে বসে থেকেছে একবার ডাক পাবার আশায়। নিজেকে তখন বৃন্দাবন কালীমতীদের মতোই অপদার্থ মনে হয়েছে তার।

অথচ ননীমাধব তো কালীমতীদের মতো নয়। জাতে, বংশ মর্যাদায়, চেহারায়, গুণে সে কালীর ঢের ওপর তলার মানুষ। সে গ্রামের কৃষ্ণ যাত্রার এক নম্বর নায়ক। গান আর অভিনয়ে তার সহজ দক্ষতা, কিন্তু থিয়েটার পাড়া সে কথা বোঝেনা। এখেনে চেনা জানা মানুষকে পাইয়ে দেওয়ার খেলা বিরাট। ননীমাধব জানে তার অভিনয় ক্ষমতাকে এরা ভয় পায়। গাঁয়ের সামান্য যাত্রার নায়ক এদের থেকে এগিয়ে থাকবে এ মেনেই নিতে পারেনা। তাই চেপে দিতে চায়। যে থিয়েটারেই গেছে সেখানে গিয়ে ননীমাধব প্রায়ই শোনে

“তোমাকে তো যাতা পাট দিলে চলবেনা তুমি নায়ক মানুষ , অনেক ভেবেচিন্তে দিতে হবে। দেকচো তো নায়ক ঠিক হয়ে আচে, বড় পাট যাঁরা করবেন তাঁরাও এক রকমের প্রস্তুত। তুমি বরং নায়কের প্রক্সি থেকো, সে কোনও দিনও আসতে না পারলে তুমি করো। ”
কোনও নায়কের আজ অব্দি কামাই দেখেনি সে। কামাই করলে ননীমাধব পাট বলার ক্ষমতা কাকে বলে দেখিয়ে দিত। এই ভাবে নিজেকে চেনানো ছাড়া আর কীই বা উপায় আছে। অবিশ্যি নজরে পড়ার ভাগ্য সকলের থাকেনা। আর ননীমাধবকে সুযোগ যাঁরা দেবেন বলেছেন এতো দিন তাঁরা নিজেদের চেয়ে নিম্ন মেধার চাটুকারদের সুযোগ দেন। নচেৎ নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করা কঠিন। অমৃতলাল, গিরিশ ঘোষ, অর্ধেন্দুশেখর এঁদের মতো যাঁদের ক্ষমতা আছে, আত্মবিশ্বাস আছে নিজের ক্ষমতার ওপর এদের চোখে তো এতোদিন পড়েনি ননী। তাই এসব নানান কারণে ননীর থিয়েটার করা হয়নি। এ থিয়েটার ও থিয়েটার রোজই ঘোরে ননী। আশা করে একদিন চোখে পড়বে গিরিশবাবু, বেল বাবু, অর্ধেন্দুশেখরদের। ননীমাধব আর গিরিশ বাবুদের মাঝখানের দলটিকেই কেবল ভয়। এরা নিজেরাও ওঠেনা কাউকে উঠতেও দেয়না।

আজ এতোদিনে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ এসেছে। অথচ আজ তার এখেনে থাকার উপায় নেই। তরুলতা কি করবে তবে। কলকেতা,শহরের কিচ্ছু চেনেনা সে। তার সঙ্গে এক বস্ত্রে বেরিয়ে এসেছে আজ। এই তপ্ত দুপুরে মেয়েটাকে পুঁটলি হাতে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে এসেছে নননীমাধব। তাকে ফেলে রেখে সে মহলায় বসে থাকে কি করে! ননীমাধব বলে হা ঈশ্বর একি পরীক্ষায় ফেললে, আমার দুদিকে দুই স্বপ্ন। কাকে ফেলে কাকে রাখি।

ক্রমশ…

172 thoughts on “কত রঙ্গ দেখি কলকেতায় | নীলা বন্দ্যোপাধ্যায়

  1. বাংলা থিয়েটারের জ্যান্ত অতীত নিয়ে এমন লেখা সত্যিইই বিরল।

    1. খুব ভালো লাগছে। এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম।

    1. খুব ভালো লাগল। পরের পর্বের অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে থাকলাম।

    1. আমি সেই যুগে ফিরে গেছি। প্রতিটি ঘটনা স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছি। ভীষণ ভাল লাগছে নীলা।

  2. এমন সহজ বাংলায় সেই সময়ের কথা আজকের লেখিকা যেভাবে বর্ণনা করেছেন তা এককথায় অসাধারণ। যেমন রসবোধ, তেমনি তার ধারালো বাক্যচয়ন।
    এবার একটু দেরিই হলো।আসলে লেখা তো চাইলেই পাওয়া যায় এমন নয়, অনেকে লেখেন যে কেন দেরি হচ্ছে, কেন এতটুকু লেখা ইত্যাদি।
    এমন চিন্তা ভাবনা করতে সেই সময়ের ইতিহাসকে মিশ্রিত করতে সময় লাগে পাঠক।
    আশায় রইলাম পরবর্তী লিংকের জন্য। শুভেচ্ছা রইলো লেখক কে।

  3. Кулінари розповіли, чи потрібно промивати манку перед приготуванням. Проте кулінари, які мають пристрасть до експериментів, все ж спробували провести такий досвід корисні поради для жінок. Може викликати свербіння та лущення: експерти розповіли, чим не можна вмиватися у спеку. Жирні текстури добре взаємодіють з жировмісними і рідкими речовинами. Тому, змішуючись з потом, вони не скочуються, на них не утворюється плям, що часто трапляється з сухими текстурами.

Comments are closed.