শুভেন্দুরা কোত্থাও যায় না । থেকে যায় । আলেয়ার কাজের মধ্যে , আমাদের স্মৃতির অলিতে-গলিতে, ভিন শহরে শুভেন্দু চিরঞ্জীব। তাঁর চলে যাওয়াকে থিয়েটারের মননে ধরে রাখতে ইছাপুর আলেয়ার হাল ধরেছেন বিশিষ্ট অভিনেতা প্রাবন্ধিক নির্দেশক দীপক মিত্র। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংগঠনকে শক্ত করতে নাট্যকার সঙ্গীতা চৌধুরী রয়েছেন দীর্ঘদিন। শুভেন্দুর শূন্যস্থান পূরণ না হলেও তাঁর প্রতি ভালোবাসা শ্রদ্ধা রেখে দল এগিয়ে চলেছে নানান কর্মকান্ডের মধ্যে দিয়ে।
‘মননে শুভেন্দু’ এই শিরোনামে গত ১ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর ‘২২ , শ্যামনগর রবীন্দ্র ভবনে ইছাপুর আলেয়ার নাট্যমেলা ভারত নাট্য রঙ্গলী – ৬ এর সূচনা করলেন শ্রদ্ধেয় নাট্যকার তীর্থঙ্কর চন্দ এবং বর্ষীয়ান প্রখ্যাত অভিনেতা পরিচালক অসিত বসু। আলেয়ার পক্ষ থেকে এঁদের সম্বোর্ধিত করা হয়। এই মঞ্চ থেকেই প্রকাশিত হয়েছে তীর্থঙ্কর চন্দের পাঁচটি নাটক নিয়ে ‘ ছাপ – ছবি’ নাট্য সংকলন। এছাড়া অসীম সম্মান জ্ঞাপন করা হয় নাট্যগবেষক আশিস গোস্বামী এবং নাট্যকার মৈনাক সেনগুপ্ত কে। নাট্যবন্ধু শুভেন্দু সম্মানে সম্মানিত হন নাট্যপরিচালক দেবাশিস সরকার ও ভদ্রা বসু । অভিনেতা নির্দেশক অভি সেনগুপ্তর হাতে আলেয়া সম্মান তুলে দেন অসিত বসু।
শুভেন্দু ভবিষ্যতকে দৃঢ় ভাবে প্রতিষ্ঠা দিতে পেরেছে । আরও একবার তোমাকে অভিবাদন শুভেন্দু । ভালবাসা জানায় আলেয়া। এই উৎসবে ছোটদের দুটি নাট্য মঞ্চস্থ হয় শ্যামনগর নাট্যবিতান প্রযোজনায় ছোটরা অভিনয় করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনুপ্রাণিত ‘জুতা আবিষ্কার’। নাটক রাজা ভট্টাচার্য, নির্দেশনা দীপক মিত্র। ইছাপুর আলেয়ার নিজস্ব শিশুনাটক কানাইচাঁদ পালোয়ান, রচনা রাজা ভট্টাচার্য, নির্দেশনা দীপক মিত্র। এই দুটি দল শুভেন্দুর প্রাণ, নিজের সন্তানের মতো। মঞ্চে প্রায় ত্রিশটা বাচ্চা- বড় মিলিয়ে অভিনীত হয় এই নাটক। উৎসবে অভিনীত অন্যান্য প্রযোজনা গুলির মধ্যে শিলিগুড়ি ঋত্বিক নাট্য সংস্থার একজন লক্ষ্মীন্দর, রচনা মান্নান হীরা, নির্দেশনা কুশল বোস। যাত্রিক এর ফিরে আসা ঢেউ, নাটক নির্দেশনা সুনীত ভট্টাচার্য। অশোকনগর নাট্যমুখ এর কুহকিনী বীররাত্রি, সৌমিত্র বিশ্বাসের উপন্যাস দশরূপা থেকে নাট্যরূপ নির্দেশনা অভি চক্রবর্তী। ঋত্বিক বহরমপুর এর তুষের আগুন, নাটক মোহিত চট্টোপাধ্যায়, নির্দেশনা বিপ্লব দে। আগরপাড়া থিয়েটার পয়েন্ট এর প্রযোজনা সোনার হরিণ, নাটক রাজা গুহ, নির্দেশনা রনি ভৌমিক। শেষদিনে থিয়েলাইট প্রযোজনা দূর্গা রহস্য, নাটক নির্দেশনা অতনু সরকার এবং হালিশহর ইউনিটি মালঞ্চর বহু অভিনীত জনপ্রিয় নাটক হনুয়াকা বেটা মঞ্চস্থ হয় গোপাল দাসের রচনা নির্দেশনায়।
শুভেন্দুদা আমাদের প্রিয় মানুষ। প্রিয় অভিনেতা সংগঠক নাট্যপরিচালক ছিলেন। এত অল্প বয়সে জীবনের সব লোভ, হাতছানিকে দূরে সরিয়ে থিয়েটার কে সর্বক্ষণের সাথী করে বেঁচেছিল। আলেয়ার প্রাণপুরুষ যে এভাবে অকালে চলে যাবেন তা কে জানত! তাঁর স্মরণে আমাদের অভিনয় করতে হবে এও কখনও ভাবিনি। রবীন্দ্র ভবনের সামনে সারি সারি লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অনেক শুভেন্দুরা হাসছে, হাত নাড়ছে, কেউ যেনো কাছে ডাকছে। শুভেন্দু মজুমদারের মর্মর মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে যেনো মনে হচ্ছিল তিনি আছেন, হয়তো এক্ষুনি বলবেন — ‘ দে একটা সিগারেট, কতদিন দেখা হয় না তোর সাথে বলতো! থিয়েটারটা ছাড়িস না, অভির পাশে থাকিস ভাই ‘। এই শেষ কথোপকথন হয়েছিল মির্নাভা উৎসবে। দাদা ছিলেন আমাদের কোয়র্ডিনেটর, আমি ছিলাম স্বেচ্ছাসেবক ।দাদা আপনি যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন।
দারুণ আন্তরিক ব্যবস্থা ছিল। ধন্যবাদ সকলকে।