উল্টোদিকের চেয়ারটায় কে বসবে রাজা? | পার্থ গোস্বামী

সন্ধ্যা নামলে আমি পা টিপে টিপে ছাদে উঠি । সিঁড়ির আলো জ্বালাই না। ছাদে সেটটা রেডি আছে। আমি ছাদের আলো জ্বালাই না। মাঝখানে একটা টি- টেবিল। তার দু পাশে দুটো চেয়ার। একটা চেয়ারে আমি বসি। আর একটা চেয়ারে রাজা এসে বসে।

আসলে মহলার থেকে গল্প বেশি হয়। এই তো সেদিন আমাদের প্রথম আলাপের কথা উঠল। একটি চলতি প্রযোজনা থেকে একজন শিল্পী চলে যাওয়াতে নতুন একজন শিল্পীর প্রয়োজন ছিল। ফেসবুক ঘাঁটতে ঘাঁটতে বন্ধুদের প্রোফাইলএ রাজার প্রোফাইলটা চোখে পড়ল। বহুদিন ধরে দেখছিলাম, প্রচুর নাট্কের কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িয়ে আছে রাজা। কোভিড মহামারির সময় ওর পোস্ট দেখেছিলাম – যে কোন প্রয়োজনে যোগাযোগ করার জন্য। তখন জানলাম রাজা সোনারপুরে থাকে। সাহস করে ওকে ফেসবুকে একটা বার্তা পাঠালাম। রাজা সারা দিল। আমারা দেখা করলাম। রাজা রাজি হল চরিত্রটা করতে। একসাথে চা খেলাম। পরদিন রাজা যথাসময় মহলাতে উপস্থিত। জমে উঠল মহলা – নিবিড় হল বন্ধুত্ব।

সন্ধ্যা নামলে আমি পা টিপে টিপে ছাদে উঠি । সিঁড়ির আলো জ্বালাই না। ছাদে সেটটা রেডি আছে। আমি ছাদের আলো জ্বালাই না। মাঝখানে একটা টি- টেবিল। তার দু পাশে দুটো চেয়ার। একটা চেয়ারে আমি বসি। আর একটা চেয়ারে রাজা এসে বসে।

রাজাকে আমাদের “হচ্ছে টা কি” নাটকের পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। নতুন ছেলে-মেয়েদের নিয়ে অন্যভাবে কি সুন্দর একটা প্রযোজনা তৈরি হয়েছিল। রাজাই একটা কল শোর ব্যবস্থা করেছিল করঞ্জলিতে। প্রচণ্ড শরীর খারাপ, যেটা অনেকদিন ধরে চেপে চেপে কাজ করছিলাম, সেটা প্রকট হওয়ার জন্য আমি শো টা করতে পারিনি। রাজার খুব অভিমান হয়েছিল, নিন্দুকেরা বলেছিল টাকা পাবোনা বলে শো টা করতে যাইনি। যাহোক কিছুদিন পর রাজা ফোন করে, আমরা আবার ছাদে এসে বসি। অভিমান তরল হয়।

সন্ধ্যা নামলে আমি পা টিপে টিপে ছাদে উঠি । সিঁড়ির আলো জ্বালাই না। ছাদে সেটটা রেডি আছে। আমি ছাদের আলো জ্বালাই না। মাঝখানে একটা টি- টেবিল। তার দু পাশে দুটো চেয়ার। একটা চেয়ারে আমি বসি। আর একটা চেয়ারে রাজা এসে বসে।

এক নতুন প্রযোজনার প্রথম দাঁড়িয়ে উঠে মহলা ছিল। রাজা একটু বিমর্ষ। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতে বলল, “রাতে ভাল ঘুম হছহে না দাদা, সকালে উঠলে মাথার বাঁ দিকটা যন্ত্রণা হয়।“ ভাল ঘুম হবে কি করে? মাথাজুড়ে তো শুধু রাজ্যের নাটকের চিন্তা। ওর লেখা একটি নাটক নিয়ে অপর একটি প্রযোজনা করছিল। প্রচুর পরিশ্রমের পর নাটক টা দানা বেঁধে উঠেতে পারছিল না, অভিনেতাদের অসহযোগিতার জন্য। “নীল রঙের মানুষ’ নিয়েও ওর চিন্তার শেষ ছিল না। ওর কাছে এক “মহান” অভিনেতার ফোন আসত। বলত যে, তোমার দ্বারা ওই চরিত্রটা হবে না। দুদিন বাদে নাতকটা বন্ধ হয়ে যাবে।“ সুতাহাতার শো হবার পরদিন ফোন এসেছিল, “ লাস্ট শো কেমন হল?” রাজা জিজ্ঞাসা করেছিল, “লাস্ট শো মানে?” উত্তর ছিল, “হলদিয়ার শোটাই তো তোমার লাস্ট শো, আর তো শো হবে না।“ লাস্ট শো। ‘নীল রঙের মানুষের’আমার একটা সংলাপ বারে বারে মনে পড়ছে, “হে ঈশ্বর, দেখুন দেখুন, , মানুষের মনে কত বিষ!” দেখলাম, মানুষের জিভে কত বিষ।

পরিকল্পনা ছিল দু-জনের দুটো নতুন মনোলগ সারা রাজ্যের স্পেসগুলতে ঘুরে বেড়াব।

সন্ধ্যা নামলে আমি পা টিপে টিপে ছাদে উঠি । সিঁড়ির আলো জ্বালাই না। ছাদে সেটটা রেডি আছে। আমি ছাদের আলো জ্বালাই না। মাঝখানে একটা টি- টেবিল। তার দু পাশে দুটো চেয়ার। একটা চেয়ারে আমি বসি। রাজা আর আসেনা। রাজা আর আসবে না। আমি জানি ও খুব অভিমান করেছে। এক মুঠো মাটি ওকে দিতে পারনি। মাত্র এক মুঠো মাটি।