বিজয়কুমার দাস
থিয়েটার সেই ছোটবেলা থেকে জড়িয়ে ধরেছিল অভীপ্সাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই সম্পর্ক নিবিড় হয়েছে। শিথিল হয়নি কখনও।আসলে বাবা ( প্রমিত ঘোষ) – মা ( সুপর্ণা ঘোষ) এর দৌলতেই থিয়েটারের সঙ্গে পরিচয় অভীপ্সা ঘোষের। মানে মিষ্টি (ডাকনাম)। ছোটবেলায় শীতের ছুটিতে টাটা সুমোর পিছনের সিটে বসে গ্রামে গঞ্জে যাওয়া বা দূরপাল্লার ট্রেনে চড়ে বাবার সঙ্গে নাটকে যাওয়ার কষ্টে অভীপ্সার মনে হত,আর যাই হোক নাটক কখনও করবে না। অথচ সেই নাটকই জড়িয়ে ধরল তাকে। আসলে ছোট থেকে এইসব নাটুকে অভিজ্ঞতার মধ্যে থাকতে থাকতেই হয়তো অজান্তে থিয়েটারকে ভালবেসেছিল অভীপ্সা।
তাই পরবর্তীকালে নাটক নিয়েই স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর। স্ক্রিপ্ট রাইটিং নিয়ে স্নাতকোত্তর। জীবনের বেশ কিছু সময় কলকাতার পাশাপাশি সুভাষগ্রাম, বেলঘরিয়া, বিরাটি, বাঘাযতীন, যাদবপুরকে কেন্দ্র করে কেটেছে। তবে মঞ্চে নামার অভিজ্ঞতা যখন প্রথম অথবা দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। সেটা ২০০৪-০৫ সাল নাগাদ। স্ববাক দলে নীলিমা চক্রবর্তীর নির্দেশনায়” বন্ধনহীন গ্রন্থি ” নাটকে এক অন্ধমেয়ের চরিত্রে। যথাযথ জ্ঞানোন্মেষের আগেই মঞ্চে নামা।
ছোটবেলা থেকেই নাচ গান আবৃত্তি আঁকার মধ্যে থাকলেও আবৃত্তিটাই বেশি প্রিয় হয়ে উঠেছিল। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী যখন তখন “জীবনে কী হতে চাও” শীর্ষক রচনায় লিখেছিল রেডিও সঞ্চালিকা হওয়ার ইচ্ছের কথা। চলচ্চিত্র, দূরদর্শন ধারাবাহিকে শিশু চরিত্রে অভিনয়ের অভিজ্ঞতার সুযোগ পেয়েও সেসব মাধ্যমে থাকার ইচ্ছা হয়নি অভীপ্সার।শেষ পর্যন্ত থিয়েটারেই জুড়ে যাওয়া তার।
সেই থেকে থিয়েটার যাপনই তার ভবিতব্য হয়ে উঠেছে। থিয়েটার তাকে অভিজ্ঞ করেছে।একসময় অনুভব করেছে, থিয়েটার তাকে জীবন সম্পর্কেও অনেক কিছু শিখিয়েছে। শুধু অভিনয় নয়, একটা থিয়েটার নির্মাণের সমগ্র পদ্ধতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে থাকাটাই তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। নাটক লেখা, কোরিওগ্রাফি, আলোকসম্পাত, আবহ প্রক্ষেপণ সব কিছুর সাথেই জুড়ে থাকাটাই তার পছন্দ। স্বপ্নসন্ধানীর কর্মশালা, প্রবীর গুহর কর্মশালায় তৈরি করেছে নিজেকে।কাজ করেছে নানা দলে। বেলিঘরিয়া অঙ্গন, নিমতা দায়বদ্ধ, বরানগর মনন, বোলপুর ইন্দ্রিয়, অলটারনেটিভ লিভিং থিয়েটার, মধ্যমগ্রাম জার্ণি থিয়েটার, মধ্যমগ্রাম নৃত্যবিতান, অশোকনগর নাট্যমুখ, অশোকনগর ব্রাত্যজন, নারকেলডাঙা স্বপ্নিল প্রভৃতি দলে বিভিন্ন নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে ইতিমধ্যেই। তবু শুভদীপ গুহর নির্দেশনায় সোয়াচান পাখির বাসা নাটকে একটাও সংলাপ না থাকা ফুলি চরিত্রের প্রতি একটা ভিন্ন রকম দূর্বলতা আছেই প্রিয় চরিত্র হিসাবে। এ চরিত্র যেন কিছু না বলেও অনেক কিছু বলা একটা আশ্চর্য ভাল লাগা চরিত্র। পাশাপাশি “তিতাস” নাটকে অনন্তবালা চরিত্রটির প্রতিও একটা বিশেষ ধরণের দুর্বলতা আছে।
পরিচালক হিসেবে প্রমিত ঘোষ, বিভাস চক্রবর্তী, প্রবীর গুহ, শুভদীপ গুহ, অভি চক্রবর্তী, দেবাশিস দত্ত, দেবাশিস ঘোষদস্তিদার প্রমুখের নির্দেশনায় কাজ করেছে অভিনেত্রী অভীপ্সা। বাবা প্রমিত ঘোষ একসময় নারকেলডাঙা স্বপ্নিল দলের নির্দেশকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই দলে কবি কঙ্কাল, তিতাস একটি নদীর নাম, দহনকাব্য, নটী কিরণশশী পাশাপাশি অন্য দলের নাটক সময়যান, আমি অনুকূলদা আর ওরা, বিসর্জন, সোয়াচান পাখির বাসা, Anti Virus ও সম্প্রতি নাট্যমুখের আরেকটি নাটক টু-সোলস প্রভৃতি তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটক।
ক্রিয়েটিভ রাইটার – কন্টেন্ট রাইটার এর চাকরী করার অভিজ্ঞতাও আছে। কিন্তু থিয়েটার ছাড়া আর অন্য কিছু নিয়ে ভাবতে চায়নি। অবশ্য লেখালেখির কাজটা চলছে।চালিয়েও যেতে চায়। থিয়েটার এভাবেই জড়িয়ে রেখেছে অভীপ্সাকে। অভীপ্সাও নিজেকে জড়িয়ে রেখেছে থিয়েটারে। থিয়েটার এভাবেই অভিনেত্রী অভীপ্সার ভালবাসার আর এক ভুবন।
কুর্নিশ!! শাফল্য তোমায় জড়িয়ে রয়েছে আরো এগিয়ে যাও বন্ধু…. Story should be continue….
অসাধারণ বলবেন।
ভালো থাকিস।