বিভাব ৪
সমালোচনা
শম্ভু বাবু দেখালেন মঞ্চসজ্জা, নটনটীর পোশাক আর আলোকসম্পাতের যাদু ছাড়াও নাটক হয়। দর্শকদের কল্পনাশক্তির ওপর আস্থা রাখতে হয়। সেই কল্পনার উৎসমুখকে খুলে দিতে হয়। তখন প্রেক্ষাগৃহ আর মঞ্চের ফারাকটা অনেকখানি ঘুচে যায়।…
অভাব নাটক : একটি আবেদন / দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ; বহুরূপী : ৬৯ তম সংখ্যা প্রকাশ – ০১.০৫.১৯৮৮ সম্পাদক : কুমার রায়
জাপানি আঙ্গিকে ছোট্ট … একাঙ্কিকাটিকে প্রথম থেকে আমরা হাসি তামাসা ব্যাপার বলেই মনে করে ছিলাম। কিন্তু এর বিস্ময়কর পরণতি যেন সপাং করে এক ঘা চাবুকের মতো এসে পড়লো সমাজ ও রাষ্ট্রের ওপর। চমকে উঠলাম। কেবল দৃশ্যটির পরিণতির জন্য নয়, চমকে উঠলাম এর পরিবেশনার কায়দায় এবং অভিনয়ের নিতান্ত বৈঠকী আঙ্গিকের জন্য। মনে হলো, সুযোগ পেলে এঁরাই নাট্য জগতে বিপ্লব ঘটাবার শক্তির প্রকৃত অধিকারী।
— দেশ ২১.৫.১৯৫১
মানুষ, মানুষের জন্য
বহুরূপী এখন সবার চেয়ে আলাদা। আলাদা মানুষ শম্ভু মিত্র, বহুরূপীর প্রাণপুরুষ।
পুরুষ অভিনেত্রী দিয়ে বীণা থিয়েটার চালাতে চেয়েছিলেন কবি রাজকৃষ্ণ রায়। অন্যান্য রঙ্গালয়ে তখন পতিতা নিয়ে নৃত্যগীত আমোদের হৈ হল্লা চলছে। কয়েক মাসের মধ্যেই রাজকৃষ্ণের বীণার তার ছিঁড়ে গেল। রঙ্গমঞ্চ হাতছাড়া হলো দেনার দায়ে। নিঃস্ব রাজকৃষ্ণের সাহায্যার্থে পত্রিকার বিজ্ঞপ্তি বা বিশেষ আবেদন ছাপা হলো। তাঁকে বাঁচানোর সে কী তীব্র আর্তি। তাঁর প্রহ্লাদ চরিত্র রেকর্ড বিক্রি হলেও তিনি নিজে বিক্রি হয়ে গেলেন আদর্শের তাড়নায়। মীরাবাঈ সাজলেন বেশ্যা রমনী, বীণা রঙ্গমঞ্চে! তবুও সেদিন কোনো ভদ্রজন এই দুঃখী আদর্শবান নিষ্ঠাবান নাট্যকারকে বাঁচাতে পারেননি। তিনি মারা গেছেন অর্থাভাবে, অপমানে, দেনার দায়ে।…
শম্ভু মিত্রের বহুরূপীর বয়স এখন মাত্র ১ বছর। নবান্ন আর পথিক বাদ দিলে অবদানের মধ্যে উলুখাগড়া ছেঁড়াতার বিভাব। দুই চোখে স্বপ্ন আর ভালো নাটকের আদর্শ। গণনাট্যে যা পারেননি তা তিনি করে দেখাবেন। নাট্য আন্দোলন গড়বেন একক সাধনায়। লড়াই করবেন দেশের জন্য, দশের জন্য। যমের জন্য নয়। তাঁকে বাঁচানো সকলের কর্তব্য। অবিরত পরীক্ষা নিরীক্ষায় ব্যস্ত না রাখলে তা পরোক্ষ ভাবে বঙ্গনাট্যের ক্ষতি বৃদ্ধি করবে। অনেকদিন পর একজন সত্যিকারের প্রতিভাবান মানুষ এসে যোগ দিয়েছেন আমাদের উদ্ধার করার ব্রত নিয়ে।…
Sponsors of new drama movement (Bohurupee) whose progressive out look to go beyond the charmed circle of current mediocrity have to face difficulties of all sorts, ranging tram Governmental apathy to petty professional jealousy… We could not feel sorry for a state of things which how so much talent to go waste simply for want of proper encouragement and sympathy treatment.
— Hindusthan Standard, 12.5.1951
বাল্মীকির বাণী
২২.৬.১৯৫১ বহুরূপীর প্রথম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান। ওয়াই ডব্লু সি এ–হলে। অভিনীত হলো অভাবের নাটক বিভাব। সম্পাদক অশোক মজুমদার কামনা করলেন কমপক্ষে ১০০০ অনু গ্রাহক সভ্য সংগ্রহ করতে পারলে বহুরূপী বাঁচতে পারে ভালো ভাবে। বিশিষ্ট প্রবীণ নাট্যকার সাধারণ মানুষকে বহুরূপীর পাশে এসে দাঁড়াতে অনুরোধ জানালেন, এঁদের নাট্য পরীক্ষা নিরীক্ষায় জনসাধারণের সাহায্য ও সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। ‘বর্ষা মঙ্গল’ এবং অন্যান্য কবিতা আবৃত্তি করলেন শম্ভু মিত্র ও তৃপ্তি মিত্র-সহ সবিতাব্রত দত্ত, সুলেখা মিত্র, মালবিকা মজুমদার, প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়, অমর গাঙ্গুলী। গান গাইলেন দেবব্রত বিশ্বাস। সভাপতির সমাপ্তি ভাষণে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন সাধ ও সাধ্যের বৃত্তান্ত :
“বহুরূপীর ছেলেরা আমাকে জলঘটের মতো বসিয়ে রেখেছে। আমার কাজের উদ্যম কিছুই নেই, হয়তো কাজ দেখাতে পারিনি, কিন্তু আমার আন্তরিক প্রাণের যোগ এঁদের সঙ্গে আছে। আমরা প্রথম জীবনে রঙ্গমঞ্চের একটা বিপুল ভবিষ্যৎ কল্পনা করে যোগদান করি, কিন্তু পেশাদারী রঙ্গমঞ্চের ধরনধারণ দেখে আর কোন আশা রাখি না। একমাত্র শৌখিন অব্যবসায়িক আদর্শ নাট্য সম্প্রদায়ই পারে রঙ্গমঞ্চকে বাঁচিয়ে রাখতে। বহুরূপীর মধ্য দিয়ে আমি সেই ভবিষ্যৎকেই দেখতে পাই — উপযুক্ত সন্তানের নিশ্চিন্ততায় আমরা এঁদের রেখে যেতে পারব। এঁরা দুঃখ করেছেন বছরে যতগুলো বই এঁদের দেখানোর কথা ছিল ততগুলো দেখাতে পারেননি কিন্তু আমার বিশ্বাস একখানা বই-এর মধ্যেই তাঁরা যে গুণের পরিচয় দিয়েছেন তা তুলনায় চারখানার সমান। সংসার প্রতিশ্রুতির চেয়ে এঁদের গুণপনার প্রতিশ্রুতিই উজ্জ্বল । এক বছরের কৃতিত্বে এঁরা আশা করেন এ-বছরে অনুগ্রাহক ও পৃষ্ঠপোষক তাঁরা যথেষ্টই পাবেন। যাঁরা এঁদের ভালোবাসেন, এঁরা যাতে আরো ভালো নাটক পরিবেশন করতে পারেন তার জন্যে তাঁদের সক্রিয় সমর্থন আরো বেশী দরকার।”
এই হচ্ছে পুত্রবৎ শম্ভুর প্রতি মহর্ষির নিশ্চিন্ততা। বাল্মীকির বাণী সত্যি হয়েছে মাত্র ৬ টি প্রযোজনা ৬০ টি নাটকের সমান হয়ে উঠবে ভবিষ্যতে … মনে পড়ে সেই সংলাপ : ‘তোমার একটা গান চারটে বঙ্কিমের সমান গো!’
ক্রমশ
অসামান্য লেখা। তথ্যে ঠাসা। পড়তেও সহজ।
Sotti oshadharon..❤️
❤❤❤
Great job..👍
সমৃদ্ধ হলাম