থিয়েটারের পথেই হাঁটতে চায় রেশমা | বিজয়কুমার দাস | পর্ব – ৪৬

কলকাতার পাইকপাড়া অঞ্চলে বেড়ে ওঠা রেশমার। স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করার পরেও থিয়েটারের পথে পা বাড়িয়েছে থিয়েটারকে ভালবেসেই। স্নাতকোত্তর ডিগ্রীই শুধু নয়, তার পাশাপাশি এই বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে গবেষণার কাজে এগোনোর প্রস্তুতিও চলছে। আর পাশাপাশি অবশ্যই চলছে থিয়েটারে অভিনয়।

ছোট থেকেই সংস্কৃতিমনষ্ক পরিবারে বড় হয়ে ওঠাই তার এই থিয়েটারের পথে পা রাখার ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে। রেশমার দাদু বৈদ্যনাথ রায়ের হাত ধরে তার নাটক দেখতে যাওয়া শুরু হয়েছিল। তাই রেশমা জানিয়েছে, দাদু বৈদ্যনাথ রায়ের, প্রেরণাতেই থিয়েটারের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল। মা মালা দাস এবং বাবা জয়ন্ত দাসও মেয়ের থিয়েটারচর্চা এবং লেখাপড়ায় প্রেরণা জুগিয়েছেন। মায়ের পরিবারের দিকে অর্থাৎ মামার বাড়ির অনেকেই থিয়েটারে অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁরা রঙ্গনা, বিজন থিয়েটার, মুক্তাঙ্গনে নিয়মিত নাটকে অভিনয় করতেন। মা মালা দাস যুক্ত গানের জগতের সঙ্গে। আর এসব কারণেই থিয়েটারে আসার ক্ষেত্রে কোন বাধা ছিল না রেশমার। এক্ষেত্রে আরো একজনের ভূমিকা আছে তার জীবনে। বিশেষ বন্ধু আঞ্জিত মজুমদার এক্ষেত্রে অন্যতম প্রেরণাদাতা। আঞ্জিত নিজেও থিয়েটারের একজন অভিনেতা।

উত্তর কলকাতার পাইকপাড়া অঞ্চলের মেয়ে রেশমার লেখাপড়ার শুরু শ্যামবাজারের সরস্বতী বালিকা বিদ্যালয়ে। পরে শিল্প শিক্ষা সদন থেকে মাধ্যমিক। স্কুলে পড়ার সময় বিভিন্ন নাটকে অভিনয় এবং নাচে অংশগ্রহণের সুযোগ মিলেছিল রেশমার। এর ফলে সাংস্কৃতিক চেতনা গড়ে উঠেছিল। বলা যায়, ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছিল এখানেই। দমদম রোড গভর্নমেন্ট স্পন্সর্ড স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়ে মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজ থেকে সাংবাদিকতা ও গণজ্ঞাপন বিষয়ে অনার্স গ্রাজুয়েট হওয়ার পর এই বিষয়েই স্নাতকোত্তর। প্রস্তুতি চলছে গবেষণা করার। তারই মাঝে থিয়েটারের প্রতি অমোঘ আকর্ষণ তাকে নিয়ে এসেছে থিয়েটারের জগতে। আকাশবাণী কলকাতার সংবাদ বিভাগে সংবাদ পাঠক ও অনুবাদক হিসাবেও কর্মরত রেশমা। তার থেকেই সময় বের করে নিয়ে থিয়েটারে অভিনয়।

বেলগাছিয়া রঙ্গসৃজন নাট্যচর্চা কেন্দ্রের প্রযোজনায় তাপস দত্তের নির্দেশনায় “সারদা শিল্পী রামকৃষ্ণ” নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে গ্রুপ থিয়েটারে অভিনয়ের পর্ব শুরু হয় রেশমার। বিভিন্ন নাট্য কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে থিয়েটারের পাঠ নিয়েছে সে। নাট্য নির্দেশক পঙ্কজ মুন্সীর অধীনে প্রথমবার কর্মশালায় অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা তার অভিনয় জীবনের ঝুলিতে রয়েছে । পরে দেবেশ চট্টোপাধ্যায়, মুরারী মুখোপাধ্যায়, কৌশিক কর, জয়রাজ ভট্টাচার্য, সৌরভ পালোধী, তূর্ণা দাশ, প্রসেনজিৎ বর্ধন, সুমন দাস, অতনু সরকারের মত নাট্য প্রশিক্ষকের অধীনেও কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেছে। এইসব কর্মশালায় প্রশিক্ষণ নেওয়ার সূত্রে থিয়েটারে অভিনয়ের আগ্রহ বেড়েছে অবশ্যই। ভূমিসুত থিয়েটারের স্বপ্নদীপ সেনগুপ্তর অধীনে “সূর্যতোরণ” নামে কর্মশালাভিত্তিক প্রযোজনায়, ইচ্ছেমত নাট্যদলের কর্মশালাভিত্তিক প্রযোজনায় এবং সমরেশ বসুর শ্যামবাজার নাট্যচর্চা কেন্দ্রের “সত্যি গপ্পো” এবং “ভদ্দরলোক” নাটকে অভিনয় করেছে রেশমা। এই কর্মশালার সূত্রেই পরে রেশমা যুক্ত হয়েছে দমদমের ইফটা নাট্যদলে। এই নাট্যদলের কর্ণধার ও নির্দেশক দেবাশিস দত্তর নির্দেশনায় ” জিন তেরে বিন ” নাটকে অভিনয়ের সুযোগ হয় তার। পরে এই দলের প্রযোজনা “ভাঙা সম্পর্কের যাদুঘর” নাটক সহ আরো দুটি নাটকে অভিনয় করছে রেশমা। নাট্যছন্দ দলে মানব রায়ের নির্দেশনা এবং সবুজ সাংস্কৃতিক দলে রাজেশ দেবনাথের নির্দেশনাতেও অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সে। থিয়েটার তার কাছে নেশা থাকলেও এখন পেশাগতভাবেই থিয়েটারে যুক্ত হয়েছে রেশমা। থিয়েটারে অভিনয়ের এই জীবনটা তাকে একটা অন্য আনন্দ জগতের সন্ধান দিয়েছে। নানা নাটকে অভিনয় করতে করতে, কর্মশালায় প্রশিক্ষণ নিতে নিতে এবং এক একটা নাটকে এক একটা চরিত্র হয়ে উঠতে উঠতে রেশমা দাস যেন নিজেকে প্রতি মুহুর্তে আবিষ্কার করছে।

আকাশবাণীর কর্মজীবন, আগামী গবেষণার প্রস্তুতির পাশাপাশি থিয়েটার তার ভালবাসার ভুবন হয়ে উঠেছে। থিয়েটারের অনন্ত যাত্রাপথে আরো আরো হেঁটে যেতে যেতে নিজেকে আরো বেশি করে সে আবিষ্কার করতে চায়। তাই থিয়েটারের পথেই থাকতে চায় রেশমা।