আগে যা ঘটেছিল…
ব্রাহ্ম মুহূর্ত বা তারও কিছুটা আগে থেকে বিনোদিনী গঙ্গার পাড়ে বসে। এক আশ্চর্য মনোমুগ্ধকর কণ্ঠে মন্ত্রপাঠ শোনে বিনোদিনী। সে মন্ত্র বিনোদিনীকে পাপ পুণ্যের দোলাচলে ভোগায়। তাঁর গুরু গিরিশকে মনে পড়ায় সে মুহূর্ত। গিরিশ ঘোষকে মন প্রাণ শরীর সমস্ত সমর্পণ করেও লোকটার কাছে সে অসামান্য অভিনেত্রী ব্যাতিত কিছু নয়, কখনও হয়ওনি। এমনকি বিনোদিনীর নামে থিয়েটারেও গিরিশের আপত্তি। এইসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে বিনোদিনী সেই আশ্চর্য মন্ত্রোচ্চারকের দেখা পায়। সিমলের নরেন দত্ত। বিনোদিনী অবাক হয়, শুনেছে নরেন দত্ত চরম দাম্ভিক, নাস্তিক। বিনোদিনীর সেদিন কেবল নরেন দত্ত নয় ব্রাহ্ম মুহূর্তে দেখা হয় প্রখ্যাত অভিনেত্রী গোলাপসুন্দরীর সঙ্গেও।
পর্ব – ৫
সিঁড়ি ভেঙে যত দ্রুত নিচে নেমে যাওয়া যায় ওপরে ওঠা তত দ্রুত সম্ভব হয়না। নিচের দিকের এক অমোঘ টান থাকে। অল্প বয়সে সে টানে তরতর করে নেমে যেমন যাওয়া যায়, তেমনি সে টানকে অগ্রাহ্য করে তরতরিয়ে ওঠাও যায়, মাথায় ভার কম থাকে বলে বোধহয়। ক্রমে বয়স যত এগোয় নিচে নামা তবু যায় ওপরে ওঠার ভারি কষ্ট। আসলে বয়সের সঙ্গে মাথার আর মনের ভারখানিও বাড়তে থাকে। সে ভার পা দুখানিকে কেবলই মাটিতে গেঁথে দিতে চায়।
গোলাপ গঙ্গার ঘাটের সিঁড়ি ধরে খুব কষ্ট করে কয়েক ধাপ ওঠে, মাঝ বরাবর এসে হাঁপ ধরে। সকলকে মাঝখানটিতে পৌঁছেই সিদ্ধান্ত নিতে হয় আবার নিচে চলে যাবে নাকি ওপরে উঠবে। গোলাপও কিছুক্ষণ ভাবে তারপর সিদ্ধান্ত নেয়, ওপরেই উঠবে। কিন্ত ওপর দিকে তাকিয়ে মনে হয় আরকি উঠতে পারবো! তারচেয়ে নিচে নেমে অপেক্ষা করা ভালো। যদি কেউ এসে ওপরে নিয়ে তুলে নিয়ে যায়। ঘুরে নিচের দিকে নামতে গিয়েও গোলাপ ওপরের সিঁড়িতে পা দেয়। তার এ জীবনে আর কোনও পতিত পাবন আসবেনা একথা সে বুঝে গেছে। নিজেই কষ্ট করে ওঠার চেষ্টা করা ভালো। উঠতে উঠতে আজকাল হাঁপ ধরে গোলাপের। নাম করা কবরেজ দেখিয়েছিলো গোলাপ। তিনি গোলাপকে বলে ছিলেন তার শরীরে কোনও ব্যামো নেই। সব নাকি মনের ব্যামো। গোলাপ অবাক হয়েছিলো, মনেরও আবার ব্যামো হয়! তবে কি কবরেজ মাথার ব্যামোর কথা বলছেন! গোলাপ ফিরে করবেজ মশাইকে জিজ্ঞেস করে তার কি তবে মাথার ব্যামো হয়েছে! কম কথার কবরেজ কেবল বলেছিলেন ”না মনের, এ বয়েসে সব মেয়েরই এমনটা হয়”।
কিন্তু কি’ই বা বয়স গোলাপের, বত্রিশ তেত্রিশ হবে। দেখলে তাও বোঝার উপায় নেই। নির্মেদ শরীর, ঢেউ খেলানো চুল, উজ্জ্বল ত্বক আর কিশোরীর মতো কণ্ঠস্বর এখনও। বাইরে থেকে বোঝার উপায় না থাকলেও গোলাপ জানে অন্তরে তার বার্ধক্য প্রবেশ করেছে, শরীরেও। আগে মাসে চব্বিশ দিন সে গঙ্গা স্নানে আসতো। ছটি অপবিত্র দিনে বন্ধ থাকতো গঙ্গা দর্শন।আজকাল মাসের সে সব হিসেব কেমন গোলমাল হয়ে যায়। দু, তিন দিনেই সব পরিষ্কার। গোলাপের ভয় করে ভারি। তবে কী যৌবন বিদায়ের কড়া নাড়ছে! এতো দ্রুত! গোলাপের মায়ের উনপঞ্চাশেও রক্তের অভাব ঘটেনি আর গোলাপ বত্রিশেই অন্তু যৌবনা! এসব ভাবলে দরদরিয়ে ঘাম হয় গোলাপের। সারাদিন অবসন্ন হয়ে পড়ে থাকতে ইচ্ছে হয়। তবু গোলাপ কাউকে জানতে দেয়না তার ভয়ের কথা। অভিনেত্রীরই বলো আর বেশ্যারই বলো যৌবন গেলে আর কিছু থাকেনা। গোলাপ মনে মনে ভাবে আজকাল, আচ্ছা সে যদি গৃহস্থের বধূ হতো তবেও কি গোলাপের এমন ভয় করতো, ওদের ভয় থাকে গতযৌবনা হবার! পুরুষমানুষের কাছে তার পরেও ওদের দাম থাকে! এ প্রশ্নের উত্তর গোলাপকে দেবার কেউ নেই। ওর আশেপাশের সব মেয়েমানুষরাই ওর মতো এ ব্যাপারে অসহায়। বরং গোলাপের মতো তাদের মনে যদি এ প্রশ্ন উঠতো তবে গোলাপকেই সকলে জিজ্ঞেস করতো। খাতায় কলমে গোলায় ভদ্র বেনে বাড়ির বৌ। তার স্বামী গোষ্টবিহারী দত্ত তাকে রীতিমতো সামাজিক স্বীকৃতি দিয়ে বিয়ে করেছিলেন।
এই সব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে কয়েক ধাপ উঠে গোলাপ দেখে বিনোদিনী এখনও অপেক্ষা করছে। গোলাপ বিনোদিনীকেও ছাড়িয়ে আরেক ধাপ ওপরে গিয়ে ডাক দেয়।
“বিনি চল তোর থ্যাটার বাড়ি দেখাবিনে।”
বিনোদিনী ঘুরে মুখোমুখি দাঁড়ায় গোলাপের। এতো কাছাকাছি যে পরস্পরের নিশ্বাস – প্রশ্বাস টের পায়। তফাত কেবল ওই এক ধাপের। বিনোদিনী হালকা সূর্যালোকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে গোলাপসুন্দরীর দিকে। পরনে গেরুয়া বস্ত্র, নাক থেকে তিলক চন্দন কাটা, গলায় তুলসীর মালা। কোঁচকানো ঘন কালো চুল চুড়ো করে বাঁধা, তার থেকে টপটপ করে জল পড়ছে। শাড়ির ওপর দিয়ে লাল ভিজে গামছা উত্তরীয়র ঢঙে আলগোছে পড়ে আছে কাঁধে। বাঁ হাতে একটা ভিজে কাপড়ের পুঁটলি। ডান হাতে কালো আলোয়ান খানা ঢেউয়ের মতো ছড়িয়ে আছে। গোলাপের গা থেকে গঙ্গার জলের সোঁদা গন্ধ আর চন্দনের গন্ধ মিলিয়ে অদ্ভুত এক সুঘ্রাণ আসছিল বিনোদিনীর নাকে।
গোলাপসুন্দরীর সামনে স্নান না সারা বিনোদের নিজেকে অশুচি মনে হয়। সে গোলাপকে জিজ্ঞেস করে
“গোলাপ দিদি, বোষ্টম হলে নাকী”
গোলাপ খিল খিল করে হেসে ওঠে। “বোষ্টম হলুম কিরে। আমি তো জন্ম থেকেই কৃষ্ণের দাস। আমরা শ্রেরামপুর মাহেশের বোষ্টম। মাহেশের রথ দেকতে গে আমার মা দিদমার গলায় কেত্তন শোনেনি এমন রসিক বড় একটা পাবিনে”
বিনোদিনী গোলাপের অতীত জানতোনা। নিজেকে ছাড়া কাউকে জানার কখনও চেষ্টাও করেনা ও। আর কি’ই বা জানবে। সব অভিনেত্রীরই তো অতীত ভবিষ্যৎ ওই বেবুশ্যে পল্লী। কেবল বর্তমানের সঙ্গে একটুকরো রঙ্গমঞ্চ জুড়ে থাকে। বিনোদিনী গলায় হালকা শ্লেষ মিশিয়ে জিজ্ঞেস করে গোলাপকে
“তা গোবিন্দের সেবা ছেড়ে মদনের সেবা ধরলে যে বড় গোলাপদিদি”
গোলাপের আজকাল ব্যঙ্গ বিদ্রুপে আঘাত লাগেনা। সয়ে গেছে। তাকে নিয়ে বাজারে তো কতই ছড়া কাটা হয়। গোলাপ বৈষ্ণবী ঢঙে জবাব দেন।
“মদন কোতা গা রাই বিনোদিনী, মধুসূদন দাদা কইতেন এযে সরস্বতীর সাধনা”
এমন কথা জন্মে শোনেনি বিনোদ। বিনোদ জবাব দেয়
” এক্কেরে মধুসূদন দাদা! তা কেষ্ট ঠাকুরের সঙ্গে বুঝি তোমার সরাসরি যোগাযোগ, তবে তো তোমার পথ ভুল এ জন্মে আর হবেনা। তিনিই পথ দেকাবেন আজীবন”
খিলখিল করে হেসে ওঠে গোলাপ,
“ওরে ডেঁপো মেয়ে খুব কতা শিকিচিস দেকচি। এ মধুসূদন সে মধুসূদন নয় লা। মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তবে তিনিও পথ দেকিয়েচেন বইকি। নইলে পতিত জেবন থেকে তুই আমি সাঁতরে উঠতে পারতুম নে।”
বিনোদিনী জানে সে কথা। বেঙ্গল থিয়েটারে প্রথম মাইকেল’ই মেয়ে চরিত্রে মেয়েদের দিয়ে অভিনয়ের প্রস্তাব করেন। তাতেই এলোকেশী, জগত্তারিণী, শ্যামাসুন্দরী আর এই গোলাপ দিদিকে নিয়ে অভিনয়ের শুরু হয়। বিদ্যেসাগর মশাই অব্দি বিরোধী ছিলেন মেয়েছেলের অভিনয় করার। মধুসূদন না থাকলে হয়তো বিনোদিনীকেও এদ্দিনে তাদের কর্নওয়ালিশ স্ট্রিটের বাড়ি আর নিজের গতর ভাড়া দিয়ে খেতে হতো। কিন্তু বিনোদিনীর গোলাপের তাকে বলা ‘ডেঁপো মেয়ে’ কথাখানা গায়ে লাগে। গোলাপসুন্দরীর চেয়ে নাম ডাক তার কিছু কম নয়। বরং বেশিই। বিনোদ আবার গোলাপের সঙ্গে তর্কে মজতে চায়।
” তিনি তো শুনিচি কেরেস্তান, ওদেরও বুঝি লক্ষ্মী, সরস্বতী থাকে!”
গোলাপসুন্দরী এ প্রশ্নের জবাব দেয়না। ওপরে ওঠার কষ্ট তার কিঞ্চিৎ কমেছে। পিছন ফিরে বাকি কখানা সিঁড়ি উঠতে উঠতে তার সুরেলা কন্ঠে আবৃত্তি করতে থাকে
“কমলে কামিনী আমি হেরিনু স্বপনে
কালিদহে। বসি বামা শতদল-দলে
(নিশীথে চন্দ্রিমা যথা সরসীর জলে
মনোহরা।) বাম করে সাপটি হেলনে
গজেশে, গ্রাসিছে তারে উগরি সঘনে
গুঞ্জরিছে অলিপুঞ্জ অন্ধ পরিমলে,
বহিছে দহের বারি মৃদু কলকলে!—
কার না ভোলে রে মনঃ, এহেন ছলনে!
কবিতা-পঙ্কজ-রবি, শ্রীকবিকঙ্কণ,
ধন্য তুমি বঙ্গভূমে! যশঃ-সুধাদানে
অমর করিলা তোমা অমরকারিণী
বাগ্দেবী! ভোগিলা দুখ জীবনে, ব্রাহ্মণ,
এবে কে না পূজে তোমা, মজি তব গানে?
বঙ্গ-হৃদ-হ্রদে চণ্ডী কমলে কামিনী॥”
মধুসূদনের এ কবিতা বিনোদিনী বহুবার শুনেছে গিরিশচন্দ্র ঘোষের মুখে। পড়েওছে একাধিকবার। তবু আজ গোলাপের কণ্ঠে যেন সম্মোহনী মন্ত্রের মতো মনে হয়। গোলাপ এগিয়ে চলে বিনোদিনী দাঁড়িয়ে থাকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো। হঠাৎ বিনোদ লক্ষ্য করে গোলাপের মাড়িয়ে যাওয়া পথে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত পড়ে আছে। বিনোদ ডাক দেয় গোলাপকে। রক্তের দাগগুলির দিকে নির্দেশ করে। গোলাপসুন্দরী সে দাগ দেখে মুখে কেমন নিশ্চিন্তির ছাপ পড়ে। অতোখানি উঠেও কয়েক ধাপ নেমে আসে। কাঁধের গামছা নিঙড়োনো জলে ধুয়ে দিতে চায় দাগ।
” জানিস বিনি আবার নতুন করে শত্রু সংহার নামছে। তাতে পাট করতে আবার ডাকছে আমায়। যারা ভাবে গোলাপ শেষ হয়ে গেচে তারা ভুল ভাবে”
বিনোদিনীর হঠাৎ মোহিনী গোলাপকে বড় অসহায় লাগে। কেমন মায়া জন্মায়
” মাঝে মাঝে কোথায় হারিয়ে যাও গোলাপদিদি। বাংলা থ্যাটারে এখনও গোলাপসুন্দরীর ওরফে সুকুমারী দত্তের অফুরান চাহিদা। তুমি না থাকলে বিনোদরা থাকতো বুঝি? তা সেসব ছেড়ে কোতায় চলে যাও বল দিকিনি”
কথা বলতে বলতে বিনোদিনী কয়েক ধাপ উঠে গোলাপের সঙ্গে একই পৈঠেতে দাঁড়ায়। গোলাপ অবাক হয়। বদমেজাজী, অহঙ্কারী বিনোদিনী তার কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছে! গোলাপের চোখে জল আসে।
” আমার মেয়েটা বডড ছোটরে বিনি। ভদ্দর নোকের মেয়ে তো। চেষ্টা করচিলেম ওদের মতো মানুষ করতে। তাই সরে ছিলাম। এইবারে ফিরবো।”
বিনোদিনী গোলাপের হাত দুখানি ধরে
” আজ এ অবস্থায় তো আমার থ্যাটারবাড়ি দেকতে যেতে পারবেনে। তার চেয়ে চলো তোমার মেয়েটাকে দেকে আসি কতো বড় হলো।”
বিনোদের এ প্রস্তাবে খুশিতে চকচক করে ওঠে গোলাপের চোখ। দশ বছরের ছোট বড় দুই নারী একই পৈঠেতে পা দিয়ে ওপর দিকে উঠতে থাকে। গোলাপ গুনগুন করে পদাবলী কীর্তন গায় সেই সঙ্গে
“এ দেহে সে দেহে একই রূপ।
তবে সে জানিবে রসেরই কূপ।।
এ বীজ সে বীজে একতা হবে।
তবে সে প্রেমের সন্ধান পাবে।।”
তারা ঘাট ছাড়িয়ে এগিয়ে গেলে পূর্ণ সূর্যোদয় হয়। গোলাপের ছ্যাকড়া গাড়িখানায় উঠে বসে দুজনে। গাড়ি ভোরের কলকেতা দিয়ে ছুটে চলে, ভিস্তিওয়ালা রাজপথে জল ছিটোতে ব্যস্ত তখন। গোলাপ গাড়ির ভেতর থেকে নির্দেশ দেয়
“কোচোয়ান জোড়াসাঁকোর পথ দিয়ে ঘুরে চলো, আমার বাড়ি কাছে হবে।”
ক্রমশ….
মন ভরেগেল। অতীতের সব স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠলো।
তুমি এতো পড়াশোনা কর কখন?
ভালো থেক সকলে।
ভারি সুন্দর কথন ভঙ্গি ! প্রতিটি পর্বে মন ছুঁয়ে যায় অতীতের সরণি । পরের কিস্তি’র জন্য আগ্ৰহ বেড়ে যায় ।
এমন ঐতিহাসিক ফিকশান লেখার জন্য লেখককে অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
অপূর্ব, আরো একটু বেশী লেখো এক একটা পর্বে, ধৈর্য্য ধরতে পারছি না ।
পুরোনো কলকাতার এক নিখুঁত ছবি ফুটে উঠেছে এ কাহিনী র ছত্রে ছত্রে।
কত কিছু জানতে পেরে সমৃদ্ধ হচ্ছি যার জন্য তোমার কাছে কৃতজ্ঞতা র শেষ নেই। আমি সত্যিই জানতাম না নাটকে মহিলাদের অভিনয় শুরুর জন্য মাইকেল মধুসূদন দত্ত র অবদানের কথা???
সমাজ যাদের পতিতা বলে দূরে সরিয়ে রাখতে চেয়েছে, তাদের ও যে সবার মত ইচ্ছে অনিচ্ছে, সাধ আহ্লাদ বা সন্তান নিয়ে স্বপ্ন ছিল আর পাঁচটা মায়ের মতোই, এসব নিয়ে কে কবে ভেবেছে???
দোকান থেকে শালপাতার ঠোঙা ভরা রসে টইটুম্বুর গরম জিলিপির স্বাদ পাওয়া হয়ে গেলে যেমন দলামোচড়া করে ঠোঙা টা প্রচন্ড অবহেলায় পথের ধারে ছুঁড়ে ফেলে, সমাজের সম্ভ্রান্ত ভদ্রকুল এইসব মেয়েদের নিয়ে সেই রকম ই আচরণ করতেন বলে অনুমান করতে পারি!!!!
সে গিরিশ ঘোষ ই হোক বা মধুসূদন দত্ত, হয় তো এদের পাদপ্রদীপের আলোয় এনে এদের কিছু খ্যাতি ও মর্যাদা দিয়েছিলেন, কিন্তু এঁদের ও তো লেখনীর জোর কিছু কম ছিল না, কিন্তু কই এদের ব্যক্তিগত সুখ দুঃখ র কথা তো এক কলম ও লিখে জাননি???
এনারা যত ই গুণী ও জ্ঞানী মানুষ ই হোক, মানসিকতা য় অন্যান্য “মাগীবাজি “করা রইস বাবুদের থেকে খুব একটা পার্থক্য দেখতে পাই না???
তবে তোমার গোলাপসুন্দরীর মতো আমার ও মনে হয় এখন আমিও দোলাচলে ওপর দিকে ওঠার চেষ্টা করব, না কি ঘাটের কিনারায় বসে অপেক্ষা করে থাকব কেউ দিনের শেষে কে এসে পাড়ে নিয়ে গিয়ে মুক্তি র পথ দেখাবে
” কে যাবি পারে, ওগো তোরা কে???”
পড়া র জন্য বসে থাকি অধীর আগ্রহে, তোমার এই পরিশ্রম সার্থক হোক, ভালো থেকো আর সাবধানে থেকো সব্বাই কে নিয়ে ❤️
আগ্রহ বেড়েই চলেছে… আরো লেখো… জানতে ইচ্ছে করছে আরো…
পড়া যতই এগোচ্ছে, উপন্যাসটি যেন নির্দিষ্ট সংজ্ঞায় বাঁধা পড়তে প্রত্যাখ্যান করছে। এটি ঐতিহাসিক উপন্যাস, নাকি মনস্তাত্ত্বিক, নাকি একটি নারীবাদী উপন্যাস,সব গুলিয়ে যাচ্ছে। অথবা পুরনো কলকাতার ছবিই কি শুধু? আসলে মনে হয়, এতে পাচ্ছি সব রঙ গন্ধ স্পর্শ নিয়ে জীবনের একখানি বিশ্বস্ত প্রতিচ্ছবি, যাকে সংজ্ঞায়িত করা অসম্ভব। বেঁচে থাকার সেই উষ্ণতা, সেই স্বাদ থেকে বিচ্যুত হতে চাই না বলে, শেষ করবার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় পরের কিস্তির প্রতীক্ষা।
অসীম কৃতজ্ঞতা লেখককে!
এমন লেখা!!ক্লাসিক কি এমন লেখা কেই বলে?
নিচের দিকের এক অমোঘ টান থাকে। অল্প বয়সে সে টানে তরতর করে নেমে যেমন যাওয়া যায়, তেমনি সে টানকে অগ্রাহ্য করে তরতরিয়ে ওঠাও যায়, মাথায় ভার কম থাকে বলে বোধহয়।
অসাধারণ উপলব্ধি! কলমকে কুর্নিশ ভাই। অপেক্ষা করে থাকি পরের পর্বের জন্য।
অপূর্ব এক ছবি যেন এঁকে দিলে। দুই নারী কে দেখতে পেলাম । অনেক কিছু জানলাম। ঋদ্ধ হবার মতো এক দৃষ্টান্ত মূলক উপন্যাসের সাথে জড়িয়ে পড়ছি। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
“সিঁড়ি ভেঙে যত দ্রুত নিচে নেমে যাওয়া যায় ওপরে ওঠা তত দ্রুত সম্ভব হয়না। নিচের দিকের এক অমোঘ টান থাকে। অল্প বয়সে সে টানে তরতর করে নেমে যেমন যাওয়া যায়, তেমনি সে টানকে অগ্রাহ্য করে তরতরিয়ে ওঠাও যায়, মাথায় ভার কম থাকে বলে বোধহয়। ক্রমে বয়স যত এগোয় নিচে নামা তবু যায় ওপরে ওঠার ভারি কষ্ট। আসলে বয়সের সঙ্গে মাথার আর মনের ভারখানিও বাড়তে থাকে। সে ভার পা দুখানিকে কেবলই মাটিতে গেঁথে দিতে চায়।”…মনে গেঁথে গেল। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।