দারোন্দায় ব্লসম থিয়েটার – অভি চক্রবর্তী

বীরভূম ব্লসম থিয়েটারের উদ্বোধন হয় ‘রাজার ছেলে’ নাটকের মধ্যে দিয়ে। নাটকটি এই নাট্যদলের কর্ণধার পার্থ গুপ্তের লেখা ও ডিজাইন করা। সেটি শুরু হয়েছিল পার্থর উঠোনে। এখন যেখানে ব্লসম থিয়েটারের স্টুডিও। সেই উঠোনের পিছন দিকে একটা বড়ো পুকুর ছিল, সেখানেই একটা মঞ্চ বানিয়ে এ নাট্য নির্মিত হয়েছিল। মঞ্চ না বলে বলা যায় একটা প্লার্টফর্ম, সেখানেই এই পারফর্মেন্স হয়েছিল। আমার নিজেদের চর্চা তথা বাংলার অগুন্তি মানুষের নাট্যচর্চার শুরুর দিনের কথা মনে পড়ে গেল। অধিকাংশের থিয়েটারের শুরুই কিন্তু এভাবেই, বাড়ির আঙিনায়। চৌকি পেতে, কাপড় টাঙিয়ে। খুব সরল এবং একমুখী শোনালেও আমরা বলতেই পারি, আমাদের থিয়েটার শুরুতে কিন্তু বাড়ির একটা মস্ত ভূমিকা আছে। আছেই।

যাহোক প্রসঙ্গে ফিরি, পার্থর ঐ পারফর্মেন্স দেখতে কিন্তু হাজির হয়েছিলেন স্বয়ং রতন থিয়াম। তিনি তার গুরুও বটে। সঙ্গে এসেছিলেন আমেরিকার ফোর্টহান ইউনিভার্সিটির তখনকার থিয়েটার ডিপার্টমেন্টের চেয়ারপার্সন ফ্লারিস সাকরো। তদানিন্তন বিশ্বভারতীর উপাচার্য প্রফেসর সুজিত কুমার বসুও ছিলেন বীরভূমের ব্লসম থিয়েটারের এই চিত্তাকর্ষক উদ্বোধনী আয়োজনে। সালটা ২০০৬ এর ১৫ জানুয়ারি। এই বর্ণাঢ্য উদ্বোধনকে নিজের চর্চার অভিমুখ তথা দিক হিসেবে তৈরি করতে পার্থর অন্বেষণ শুরু হয় এবং তিনি তার বাবার কাছ থেকে একটি ১.০৭ একর নিয়মিত চাষযোগ্য একটি ধানি জমি পান। সেখানে ধান চাষ হত বছরে একবার। প্রথমে সে জমিতে গাছ লাগিয়ে আগে পরিবেশকে সবুজ এবং মোহময় করে তুলবার চেষ্টা করেন। আজকের বিখ্যাত থিয়েটার কটেজ এই জমিতেই তৈরি। সেই জমি পার্থ পারিবারিক সূত্রে পেয়েছিলেন। পরবর্তীকালে কিছু জমি নিজেও কিনেছেন পার্থ। এখন এখানে মোট জমির পরিমান হচ্ছে ১.১ একর। এই হচ্ছে থিয়েটার কটেজের শুরুয়াৎ। ২০০৭ থেকেই এই জমিতে থিয়েটার কটেজের কাজ শুরু হয় পাকাপাকিভাবে।

বীরভূমের দারোন্দা গ্রাম ইলাম বাজার থানায়, শান্তিনিকেতন মানে বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসের খুব কাছে এর অবস্থান। বিশ্বভারতী ক্যাম্পাস থেকে থিয়েটার কটেজের দূরত্ব হচ্ছে ৮ কিলোমিটার। থিয়েটার কটেজের ঠিক পাশেই প্রায় ২০০ মিটারের মধ্যে আছে চৌপাহাড়ি ফরেস্ট। শাল, মহুয়া আর পিয়ালের জঙ্গলের মাঝে এর অবস্থান, এর ঠিক দক্ষিণ দিকে আছে অজয় নদ।

‘মূলত থিয়েটার প্র্যাকটিস করবার জন্যই এই ক্যাম্পাসের জন্ম হয়। কিন্ত আমি অবশ্যই এই ভাবে যদিও এভাবে থিয়েটার করতাম কিনা এখন আর বলতে পারিনা। জানি না আদৌ থিয়েটার করতাম কিনা! আমি ছবি আঁকতে চেয়েছিলাম। অনেকদিন ঘুরেও কোনো আর্ট কলেজে চান্স পাচ্ছিলাম না। তখন আমি থিয়েটার নিয়ে পড়তে যাই বিশ্বভারতীতে। একটা স্টুডেন্টশিপ নেওয়ার জন্য ভর্তি হয়েছিলাম ঠিক থিয়েটার করবার জন্য নয়। আরো অনেককিছু শেখার চেষ্টা করছিলাম যেমন ক্লাসিকাল মিউজিক নিয়ে ট্রেনিং নিলাম সেই ভাবেই থিয়েটারে ইন্টারেস্ট জন্মেছিল। কিন্ত আমার মূল ইন্টারেস্ট ছিল ছবি আঁকার ব্যাপারে। আমি প্রথম ২০০৫ সালে মনিপুর যাই। আমি রতন থিয়ামের নাটকের ছবিতে দেখি মানে স্টিল ফোটোগ্রাফ দেখি ইন্টারনেটে, এটাতে আমার খুব আগ্রহ তৈরি হয়। আমি তখন একটা পত্রিকা বার করতাম হিরন্নগর্ভ বলে। এই সূত্রে প্রফেসর সুজিত কুমার বসুর সঙ্গেও আমার ভালো পরিচয় হয়। উনি আমাকে সেখানে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।’ একনাগাড়ে কথগুলি বলে থামেন পার্থ।

কথাপ্রসঙ্গে এই অধ্যাপকের সহায়তার কথা বারবার উল্লেখ করেন পার্থ। এরপর তার মনিপুর যাওয়া এবং সেখানে তাদের পারফর্মেন্স, ডকুমেন্ট্রি, ক্যাম্পাস দেখা এবং রতন থিয়ামের কর্মশালায় অংশ গ্রহণ করেন পার্থ। এই ওয়ার্কশপের পরই তার মনে হয় যে থিয়েটারটা তার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশের মাধ্যম হতে পারে। আর তারপরেই ২০০৬ সালে ব্লসম থিয়েটার তৈরি হয় এবং ২০০৭ থেকে থিয়েটার কটেজ বানাবো বলে ভাবনা মাথায় আসে তার আর তখন থেকেই কাজ করে যাচ্ছেন টানা।

‘থিয়েটার কটেজ এই নামটা দিয়েছিলেন শ্রদ্ধেয় রতন থিয়াম, এটা আমার দেওয়া নাম নয়। থিয়েটার কটেজ আমি বানিয়েছি শুধু থিয়েটার প্রযোজনা হবে এর জন্য নয়, এখানে যে কোনো ধরণের আর্ট ফর্ম নিয়ে যাতে সামগ্রিক এবং নিয়মিত চর্চা হয় তার জন্য। ওয়ার্কশপ হবে, পেইন্টিং হতে পারে, ট্রাডিশনাল ম্যুরাল তার কাজও করি আমরা এখানে। নিজেদের উদ্যোগে সেটাকে কিভাবে টেরাকোটায় ট্রান্সফার করা যায় তা নিয়েও কাজ চলে প্রতিমুহূর্তে। ভাবনার আদান প্রদান চলে’- পার্থ এসব বলে যাচ্ছিলেন আর আমি ভাবছিলাম, স্বপ্ন কতো বড় হতে পারে, কতো নিখুঁত ভাবে তার চালনা পদ্ধতি গড়ে উঠতে পারে! শুনলাম এখানে মিউজ‍িকের ফেস্টিভ্যাল হয়েছে। ফোক এবং ক্লাসিকাল মিউজ‍িক উভয়েরই। জায়গাটা সাঁওতাল অধ্যুষিত তাই এখানকার বেশিরভাগ শিল্পীই সাঁওতাল। এদের সঙ্গে পার্থ কাজ করে চলেছেন দীর্ঘদিন। তাদের উৎস ও ঐতিহ্য, চলন ও আঙ্গিক নিয়ে প্রভূত গবেষণাও করেছেন তিনি। সাঁওতালদের নৃত্য-আঙ্গিক ও তার রিচ‍্যুয়াল নিয়ে ফেলোশিপ করছেন এবং থিয়েটার কটেজ থেকে সাঁওতালিতে রবীন্দ্রনাথের ৩টি নাটক প্রযোজনা করেছেন তারা। ‘মুক্তধারা’, ‘রক্তকরবী’ এবং ‘ডাকঘর’। ‘ডাকঘর’ সদ্য করেছেন তারা এই ২০২০-র মার্চে। অমলের অসুখ, অমলের অন্তরীন কালের সঙ্গে হয়তো পার্থ খুঁজে পাচ্ছিলেন এই মারণ-সংক্রামক ব্যাধি কোভিডের সংযোগ ও সাদৃশ্য। জানালেন ডাকঘরের শো হবে ভবিষ্যতে অনেক বড়ো করে। ‘এই তিনটে নাটকের শোই আমরা অনেক বড়ো করে ভবিষ্যৎ-এ বারবার করব’। দৃপ্ত কন্ঠস্বরে জানান তিনি। তাহলে কি রতন থিয়ামের ছাত্র পার্থ ভারতীয় নাট্যের জন্য হাত পাতছেন আমাদের আদি ও অকৃত্রিম সকলের গুরুদেবের কাছে? রবীন্দ্র নাটকের কাব্যের সঙ্গে সাঁওতালি ভাষার সংশ্লেষে ও সমন্বয়ে হয়তো ভবিষ্যতে আমরা নব্য কোনো নাট্যভাষা পেয়ে যাব। সে আশাতেই পার্থর চোখে চোখ রাখি আমরা।

যদিও রতন থিয়ামের ছাত্র বলে নিজেকে দাবি করলেও কাজে তার প্রভাব বা সৌকর্ষ খুব বেশি নেই বলেই মত সমালোচকদের। কি বলবেন পার্থ?

পার্থ উত্তেজিত হলেন না সামান্যও। বরং ধীরে ধীরে জানালেন, ‘রতন থিয়ামের নাটকের সঙ্গে ডিরেক্ট যোগ আমার কাজের সঙ্গে সেভাবে আছে না নেই তা সমালোচকরাই বলতে পারবেন। কিন্ত আমি যেটা তাঁর কাছ থেকে খুব আন্তরিকভাবে শিখেছি সেটা হল ব্যাকস্টেজ ম্যানেজমেন্ট আর শিখেছি যে কোনো নাটকের থিম্যাটিক কনটেন্টকে কীভাবে উপস্থাপিত করতে হয়। কী কী জিনিসের উপর গুরুত্ব দিতে হয়, কী করে সেটা প্রজেক্ট করা যায় সেই জিনিসটা খুব গুরুত্ব সহকারে শিখেছি। শেখার চেষ্টা করে চলেছি। এই বিষয়টায় আমার খুব ইন্টারেস্ট ছিল। মূলত এই দুটো জিনিস আমি খুব কাছে থেকে শিখেছি আর চেষ্টাও করেছি। বছরে আমাদের প্রায় আট থেকে দশ বার দেখা হয়। এছাড়াও আমি মনিপুর যাই উনিও নিয়মিত কলকাতায় আসেন, আমাদের ক্যাম্পাসে আসেন। আমি অনেকগুলো প্রোডাকশন ওঁনার তৈরি হতে দেখেছি। সে এক বিরাট অভিজ্ঞতা। নিজে বই কিনে এনেছি ওঁনার জন্য। রবীন্দ্রনাথের ‘রাজা’ করেছিলেন উনি সেই নিয়ে অনেক কথাও হয় আমাদের মধ্যে। তখন আমি মনিপুর গেছি রাজার শো দেখেছি। ‘When we died awaken’ বলে যে নাটকটা সেই নাটকটা আমার খুব প্ৰিয় একটা থিয়েটার। এ পর্যন্ত যতগুলো নাটক আমি ওঁনার দেখেছি তারমধ্যে এই নাটকটি আমি সামনে থেকে তৈরি হতে দেখেছি। অনেক টেকনিক্যাল জিনিসও আমি ওঁনার কাছ থেকে শিখেছি। কিন্তু আমি তো আলাদা মানুষ, আলাদা আমার কাজের ধারাই হবে। আমি তো ওঁনার কাজকে নকল করতে চাইনি। ফলত আমি যে নাটক করি তার স্টাইল একটু আলাদা, একটু অন্যরকম ভাবে ভাববার এবং প্রয়োগ করবার চেষ্টা করি। আমার কাজে প্রসেনিয়াম মঞ্চের ধারা এবং চলন- বলন মিলেমিশে আছে। আমি ওভাবেই প্রায় ব্লকিং কম্পোজিশন তৈরি করি। একদিকে দর্শক বসবে এবং মঞ্চে লুকোচুরি খেলার মতো হারিয়ে যাওয়া, সিন চেঞ্জ করা সেগুলো করতে আমার আগ্রহ থাকে।’

ভাল লাগে পার্থর কথা শুনে। প্রবাদপ্রতীম কিংবদন্তী নাট্যনির্মাতার ছাত্র হয়েও তিনি তার নিজস্বতা বজায় রেখেছেন, এতো সত্যিই বলবার মতো ঘটনা।

কথায় কথায় জানলাম ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা এই গ্রামে ৭ বার ন্যাশনাল ট্রাইব্যাল ফেস্টিভ্যাল করেছে যার নাম ছিল ‘আদি বিম্ব’। ফেস্টিভ্যাল অফ ট্রাইব্যাল ড্যান্স মিউজিক এন্ড থিয়েটার। সেখানে ট্রাইবাল ক্র্যাফটেরও প্রদর্শন হত। কিন্ত পরিস্কার জানালেন পার্থ যে এটা থিয়েটার কটেজের উৎসব নয়। এটা আকারে বাহারে এতো বড়ো একটা উৎসব যে থিয়েটার কটেজে এটা করা সম্ভব নয়। কিন্ত থিয়েটার কটেজে গিয়ে আর্টিস্টরা রিহার্সাল করতেন। সেখানে থাকতেন এরকম ঘটেছে বারবার। ‘কিন্ত এটা ভুল ধারণা যে থিয়েটার কটেজে এই ফেস্টিভ‍্যালটা হত। থিয়েটার কটেজের পাশেই একটা ফুটবল মাঠ আছে। সেখানেই সেই মাঠেই এই উৎসবটা হত। এরও আগে ২০১৪ থেকে ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা এখানে উৎসব করতে শুরু করে। আমি ছিলাম ফেস্টিভ‍্যালের কোর্ডিনেটর। আরো অন্যান্য অনেক দায়িত্ব নিয়ে আমি ফেস্টিভ্যালটা এখানে করতাম। এই প্রান্তিক অঞ্চলে নাট্যের প্রচার ও প্রসারের জন্য এটুকু করতেই হত আমাকে। এছাড়াও আরেকটা বড়ো কারণ আমার গুরু রতন থিয়াম ছিলেন এই উৎসবের আর্টিস্টিক ডিজাইনার। প্রথম ৪ টি ফেস্টিভ্যালে অবশ্য। তারপর তিনি চলে যাওয়ার পরেও ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা এখানে অনেকদিন এই ফেস্টিভ্যালটা করেছিলো। এই আয়োজনে ভারতবর্ষের প্রায় ১৫ টা রাজ্য থেকে আর্টিস্ট আসতো। বাইরে থেকে প্রায় ৩৫০ জন ট্রাভেল আর্টিস্ট আসতো। এখানে থিয়েটার পারফর্মেন্স হতো, ড্যান্স পারফর্মেন্স হতো, এক্সজিবিশন হতো। এলাহি ব্যাপার। সব মিলে ৬৫০ থেকে ৭০০ জন লোকাল ও বাইরের পারফর্মার মিলে পারফর্ম করতো। ২০১১ সালে সঙ্গীত নাটক আকাডেমিও এখানে সাঁওতালদের নিয়ে ফেস্টিভ্যাল করেছিল। সেটার নাম ছিল এনেক্স সেরেন পরব। যার বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায় নাচ ও গানের উৎসব। সেটা সম্পূর্ণ সাঁওতালি উৎসব ছিল অর্থাৎ সাঁওতাল কমিউনিটিই শুধু পারফর্ম করেছিল’।

কটেজে মাদলের বোল শোনা যাচ্ছে, মহলা শুরু হবে পার্থদের। অজয়ের নদ বয়ে একটা হালকা ঠান্ডা হাওয়া চাদরের মতো ঢেকে দিচ্ছে কটেজের উপরিভাগ সহ আমাদের শরীরও। শরীরে তৈরি হওয়া রোমাঞ্চ, রোমহর্ষক উত্তেজনা সেই হাওয়ার চাদরে আরো যেন নেচে উঠল ভিতরে ভিতরে। চা এল। চায়ের চুমুকে অস্তরাগ ছেয়ে আসছে যেন। কটেজ জুড়ে ছেঁড়া সূর্যাস্তের কমলা রং বিছিয়ে আসছে এখন। সেসব মায়াবী প্রাকৃতিক উৎযাপনের মধ্যেই পার্থ জানালেন, ‘আসলে এখানকার এই আঞ্চলিক প্রকৃতিকে, তার নানান উপকরণকে আমরা আমাদের রোজকার চর্চার মধ্যে কতটা নিয়ে আসতে পারি, কতটা ইকোফ্রেন্ডলি হতে পারে এই আমাদের আর্ট প্রাকটিস এটা আমার কাছে একটা বিশেষ চ্যালেঞ্জ যে থিয়েটার কটেজ একটা মডেল হতে পারে কিনা! আগামীদিনে এটার ধরনের কাজ আরো উঠে আসতে পারে কিনা! জায়গাটাকে কতটা অর্গ্যানিক রাখা যায় সে চেষ্টাই প্রত্যহ চালিয়ে যাই নিবিষ্ট মনে। যেহেতু আমি ট্র্যাডিশন নিয়ে কাজ করি আর এই ট্র্যাডিশনের মধ্যে এই সমস্ত প্রাকটিসগুলোই বহুস্তরে নিহিত থাকে। যদিও ঐটুকু একটা জমির মধ্যে আর সামান্য অর্থনীতির সহায়তা নিয়ে এ কাজের ইচ্ছের সঙ্গে করে ওঠার একটা বিস্তর ফারাক আছে। যদিও আমরা কেন্দ্র সরকারের অনুদান পাচ্ছি বছর ৪,৫ হলো তাও আমরা কোনো কম্প্রোমাইজ করছি না। চেষ্টা করছি লক্ষ্যে অবিচল থেকে কীভাবে শিল্পী এবং প্রকৃতি একসঙ্গে থাকতে পারে, চলতে পারে সেই এবং অভ্যেসটা চালিয়ে যেতে পারে এটাই একটা চ্যালেঞ্জ থিয়েটার কটেজের কাছে। যারা সাময়িকভাবে আসবে ওই রকম একটা জীবন যাপন একটা অনুভূতি যদি এখানে পায় তাহলে সেটা কাজের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমি এটার উপর ভীষণ জোর দিয়ে থাকি।’

এখানে এখন এখন খুব ভালো করে ১২ জন থাকতে পারেন। ৩ টে স্পেস আছে এখানে। একটা খোলা জায়গায় মাটির অ্যাম্ফি থিয়েটার বিল্ডিং ফাংশন থিয়েটার বলা যেতে পারে। যেটা ডিজাইন করেছেন পার্থ নিজেই। সেটাতে ২০০ জন অডিয়েন্স বসতে পারেন। যেকোনো ধরণের পারফর্মেন্স সেখানে করা যেতে পারে। আরেকটা স্পেস আছে এখানে যার গ্রাউন্ড প্ল্যান ছিল রতন থিয়ামের সেখানে অনেক ধরণের পারফর্মেন্স হয়। এর সামনে অডিয়েন্স বসবার জায়গা আছে, এখানে কিছুটা অর্গ‍্যানিক ফারর্মিং করা হয়। এছাড়াও এখানে ছোট একটা মঞ্চ আছে যেখানে পুতুল নাচ, বাউল গান অন্যান্য পারফর্মেন্সও করা হয়। মোটামুটি ৩ টি পারফর্মেন্স স্পেস আছে এবং ১২ জনের থাকার জায়গা আছে। পাশাপাশি অনেক গেস্ট হাউস আছে, রিসর্ট আছে তার জন্য ৪৫০,৫০০ লোকের একমুডেশন করতে কোনো অসুবিধা হয় না। এখন অব্দি বহুদল এখানে নানান কাজ করেছেন। ঠিক কতগুলো দল এখানে পারফর্মেন্স করেছেন তা এই মুহূর্তে বলা মুশকিল তবে পঞ্চাশের বেশি তো হবেই। এছাড়া অনেক ট্রাডিশনাল পারফরমার পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সব ধরণের পারফরমিং আর্টের এখানে পারফর্মেন্স হয়েছে।

পার্থদের মহলার সময় এগিয়ে আসছে। আকাশে জ্যোৎস্না পরম স্নেহে বিছিয়ে দিয়েছে তার মায়াবী আলো থিয়েটার কটেজের কোনায় কোনায়, সাঁওতালি বোল ভেসে আসছে। আমরা মহলার দিকে হাঁটতে শুরু করলাম।

জীবনটাই একটা রঙ্গমঞ্চ। আবার মনে এলো আমার। আবার।

3 thoughts on “দারোন্দায় ব্লসম থিয়েটার – অভি চক্রবর্তী

  1. এই ধারাবাহিক রচনা শুধু পাঠসুখ নয়। এটি সংরক্ষণ যোগ্য একটি পাঠ। ভবিষ্যতে বই হিসাবে দেখতে চাই এই ধারাবাহিক।

  2. অভির লেখায় এক অন্য থিয়েটার স্পেসের সঙ্গে পরিচিত হলাম। সঙ্গে সঙ্গে ওই জায়গায় যাবার ইচ্ছে হল। জানিনা কবে যেতে পারব।

    অভির লেখা যেন ক্যামেরা। ঝকঝকে রঙিন ছবি।

Comments are closed.