এক আর একে এক |

কৌশিক চট্টোপাধ্যায়

একদল মঞ্চ বাঁধে, আর একদল সেখানে নাচে, গায়, অভিনয় করে, একা প্রচার করে, টিকিট বিক্রি করে লোক জুটিয়ে আনে। আরেক দল সেই সমস্ত মানুষের সামনে নিজেদের বক্তব্য প্রকাশ করে। নিজেদের কৃৎকৌশল প্রকাশ করে।
শিল্প সৃষ্টির পর তাকে মানুষের মধ্যে নিয়ে আসার কাজে এই দুই দলকেই চাই। এখন প্রশ্ন হল — এই যে দুই দলের মধ্যে কাদের গুরুত্ব বেশি। কাদেরই বা কম।

প্রথম দল বলে — আরে দূর মশাই, আমরা মঞ্চ বেঁধে না দিলে কোথায় দেখাতেন আপনার শিল্প-টিল্প। আমরা লোকজন ডেকে আনি বলেই না আপনারা হাততালি কুড়িয়ে বাড়ি যান। একটা প্রোগ্রাম নামানো যে কতটা হ্যাপা তা তো বোঝেন না।

ব্যাস সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় দল ফোঁস করে ওঠে, আপনারা মঞ্চ বাঁধেন মানে, মঞ্চ তো বাঁধে ডেকরেটার্সের লোক। আপনারা পয়সা দেন বলতে পারেন। আর সেই পয়সাও তো দেয় দর্শক, আমরা এমন কিছু করি যা পয়সা দিয়ে দেখতে চায় বলেই না দর্শকরা টিকিট কাটে। আমরাই পারি দর্শককে সিটে চুপ করে বসিয়ে রাখতে কিম্বা হাই তুলিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিতে। আপনারা তো ব্যাজ লাগিয়ে, গুঁজে প্যান্ট জামা পড়ে শুধু কায়দা মারেন। একটা নাটক নামানোর কি যে হ্যাপা তা তো বোঝেন না।

এরপরে চলতে থাকলে আশা করা যায় উত্তরেরও উত্তর হবে। তারপর আবার প্রশ্ন আবার উত্তর। চলতেই থাকবে। কিন্তু তাতে আমাদের প্রশ্নের কোন সহজ লভ্য উত্তর পাওয়া যায় না।

একটা সময় ছিল, যখন যিনি শিল্পী তিনিই ছিলেন আয়োজক। নিজের পশরা নিয়ে নিজেই বসে পড়তেন সাজিয়ে গুছিয়ে, আজও যেমন করে অন্ধ ভিখারী রাস্তার পাশে বসে গান গায় আপন খেয়ালে। যেমন করে ছোটরা মায়ের কাপড় টাঙিয়ে মঞ্চ বাঁধে, ফুল তুলে, পাতা তুলে এনে সারাদিন ধরে সাজায়। বিকেলে ‘অমল দইওয়ালা’ হবে বলে। এই যে নিজের সমস্তটা দিয়ে সমস্তটার মধ্যে জড়িয়ে থাকা — এখানেই থিয়েটার হয়ে ওঠে রিচ্যুয়াল। কিন্তু যখনই আয়োজনের দায়িত্ব ছেড়ে আমরা প্রযোজনার দিকে নিজেদেরকে যুক্ত করতে থাকি অথবা ঠিক উল্টোভাবে প্রযোজনা সম্বন্ধে বিন্দুমাত্র আগ্রহ না দেখিয়ে আয়োজনের আনন্দে মশগুল হতে থাকি তখনই এই দুই পক্ষের মধ্যে ফারাকটা বাড়তেই থাকে।

তাই আয়োজক সংস্থারা আয়োজন করে। তাদের মঞ্চে প্রযোজকদের জায়গা দিয়ে হাতে মাথা কাটতে থাকেন। মঞ্চটিকে ঝাঁট দিয়ে পরিষ্কার করে রাখার কথা কারও মনে হয় না। যে অনুষ্ঠানে হাজার হাজার টাকা খরচ করা হয় আলোক সজ্জায়, ভিডিও রেকর্ডিং-এ সেখানে বিনা পয়সায় থিয়েটার করতে আসা বাচ্চাদের রিক্সা ভাড়াটুকু দিতেও ভুল হয়ে যায়। একটির বেশি দুটি টেবিল চাইলে আয়োজকরা কলার তুলে বলেন ‘এর বেশি সম্ভব নয়, এ দিয়েই যা পারেন করেন, বেশি কথা বলতে গেলে বলেন ‘গ্রুপ থিয়েটার করেন, অ্যাডজাষ্ট করে নিন। একটা দলকে কিছু টাকা দিয়ে গ্রুপ থিয়েটারের আদর্শ মনে করিয়ে দেন তারা। আর একটি দলকে বেশি টাকা দিয়ে আসেন গোপনে যদিও দুটি দলের প্রযোজনা মান সমান! শুধুমাত্র দ্বিতীয় দলটি নামী। কাগজে ছবি বেড়িয়েছে তাদের, আচার, ব্যবহার কথাবার্তায় তারা প্রযোজক হিসাবে বেশ গণ্যমান্য।

প্রতিটি ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে। এ তো জানা কথাই। তাই প্রযোজক সংস্থার একটু নামডাক হলেই তাদেরও আর মাটিতে পা পড়ে না। পুরনো দিনের অপমান বঞ্চনার সমস্ত হিসাব তারা মিটিয়ে নিতে চান তাদের অহঙ্কারে, উন্নাসিকতায়, চা আসতে দেরি হলে অসহিষ্ণু ভাবে চিৎকার করেন ‘চা কোথায়’। একজন বেশ ওজনদারী নামের নির্দেশককে দেখেছিলাম এক প্রতিযোগিতার আসরে। উদ্যোক্তারা অপরাধ করে অনুরোধ করেছিলেন ‘দাদা একটু এই ঘরটায় বসুন’, প্রথম দলটির হয়ে গেছে। আমরা এক্ষুণি আপনাকে গ্রীণরুম ছেড়ে দিচ্ছি। ভয়ঙ্কর অপমানিত হয়ে লোকজনকে নিয়ে প্রতিযোগিতার আসর ছেড়ে চিৎকার করতে করতে বেড়িয়ে গেলেন নির্দেশক। ভাবখানা এমন ‘জানেনা কাকে ডেকেছে— আমার নামে…’। আর এক অঙ্গন মঞ্চের বেশ নামি দল শো করতে গিয়ে প্রথমেই ফতোয়া দেন সার বেঁধে অটো দাঁড় করিয়ে না রাখলে শো করবেন না তারা। যদিও রিক্সা করানো ছিল এবং রিক্সায় ফেরাটা অসম্ভবও ছিল না। আসলে এখানে প্রযোজকরা মনে করেন আয়োজকদের কৃতার্থ করছেন।

পাঠক, এতক্ষণ দু’পক্ষেরই যে উদাহরণ দেওয়া হল মনে হতে পারে এই কি সব। এর বাইরে কি কোন ছবি নেই। নিশ্চয়ই আছে আর সেই ছবিই দেখতে চাই বলেই এ প্রসঙ্গের অবতারণা।

হাটগোবিন্দপুরে যাওয়া হয়েছিল একবার
নাট্য প্রদর্শন করতে। গ্রামের ছোট, কিশোর তরুণরা ছিল উদ্যোক্তা। গিয়ে দেখা গেল সবাই খুব চিন্তিত পর্দার দড়িটা লাগানো যাচ্ছে না, অর্থাৎ কি ভাবে বাঁধলে পর্দা দুদিকে সরবে। প্রযোজক সংস্থার দুই বন্ধু বাঁশ বেয়ে তরতর করে উঠে গেলেন মঞ্চের মাথায়। হিসেব কষে দড়ি বেঁধে পর্দা ঠিক করে নামলেন। উদ্দিপ্ত দেখাচ্ছিল তরুণগুলির মুখ। এর আগে কাউকে অনুরোধ করার সাহসই পায়নি ওরা। আরেক শীতের রাত্রে নাটক শেষ করে দাঁড়িয়ে আছি বেথুয়াডহরিতে খোয়ার লরি ধরবো বলে। লরিতে মালপত্র তোলা হয়ে গেছে, আয়োজকদের একজন ছুটতে ছুটতে এলেন একটা বড় হাঁড়িতে খাবার বেঁধে নিয়ে। আমরা তো অবাক। আমাদের টিফিন খাওয়া হয়ে গেছে অনেক আগেই। ওরা বললেন তাতে কি। এতটা যাবেন রাস্তায় লেগে যাবে। মনে পড়ে যায় সেই শব্দ কটি ‘সব ঠাই মোর ঘর আছে, আমি সেই ঘর মরি খুঁজিয়া।’ এই উষ্ণতা, এই বন্ধুত্বের জন্যই তো ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়িয়ে বেড়ানো এখানে— ওখানে সেখানে। কোথাও আয়োজক হয়ে কোথাও প্রযোজক হয়ে। আসলে এ-পক্ষ আর ও-পক্ষ বলে এতক্ষণ যত কথা বলা হল তার থেকে এটাই স্পষ্ট করে নেওয়া যায় এ-পক্ষ আর ও-পক্ষ দু-পক্ষ নয়, দুয়ে মিলে একপক্ষ, তবে আর এক পক্ষ কোথায়? জানো না কি তাদের বিরুদ্ধেই তো আমাদের থিয়েটার। আমাদের বেঁচে থাকা।

1,067 thoughts on “এক আর একে এক |

  1. They’re inspirational quotes.
    https://apostrraff548.com
    Examples of Aphorism in Literature
    So what do you do.
    But Yoda isn’t having it.
    Washington’s message was that it’s wiser to be upfront and deal with the consequences.
    That’s not what you expected, was it.
    Not so much.
    You’re prepared to use these handy little sayings to make your prose more relatable.
    They’re written in countless books and passed down as folk wisdom.
    Proverbs, on the other hand, can be much longer than aphorisms and adages.
    Fall seven times, stand up eight.
    Michael Corleone from The Godfather II disagreed with that.
    Yup, you guessed it.
    Sometimes, though.
    It originated from Lady Mary Montgomerie Currie’s poem Tout vient a qui sait attendre.
    It’s time.

  2. Make love not war.
    https://kartuz327.com
    Rain before seven, fine before eleven.
    Quid pro quo Link to proverb.
    Flattery will get you nowhere.
    If life deals you lemons, make lemonade.
    Early to bed and early to rise, makes a man healthy, wealthy and wise Link to proverb.
    As thick as thieves Link to proverb.

  3. If you can do something, then you need to do it for the good of others.
    He once stated, It is better to be alone than in bad company.
    Shifting gears a little, let’s talk about one of the world’s greatest aphorists – Benjamin Franklin.
    Today, calling someone a Jack of all trades is usually a jab because it implies that their knowledge is superficial.
    Then use it as a guideline to stay focused on your general theme.
    Don’t judge a book by its cover.
    Take this proverb, for example.
    Better safe than sorry is a piece of wisdom from Samuel Lover’s book, Rory O’More.
    Check it out.
    Yup, you guessed it.
    Shifting gears a little, let’s talk about one of the world’s greatest aphorists – Benjamin Franklin.
    It meant that the person was versatile and adept at many things.
    And get this.
    Today, I’ll define aphorism and show you how these handy little sayings make your writing more memorable.
    20 Aphorism Examples
    Speaking of being safe, that’s another aphorism example that you’ve probably heard before.

  4. What am I referring to.
    Washington’s message was that it’s wiser to be upfront and deal with the consequences.
    One of his most notable is, An ounce of prevention is worth a pound of cure.
    It originated from Lady Mary Montgomerie Currie’s poem Tout vient a qui sait attendre.
    You’re prepared to use these handy little sayings to make your prose more relatable.
    What is an Aphorism.
    Brevity is the key.
    So what do you do.
    He knows that Luke should either decide that he can do it or decide to quit.
    This aphorism is short and sweet, but it teaches us a valuable truth.
    Sometimes, though.
    The original saying was, Eat an apple on going to bed, and you’ll keep the doctor from earning his bread.
    Give it a try!
    They’re inspirational quotes.
    Both sayings highlight the benefits of waking up early.
    It originally read, Count not they chickens that unhatched be…