অভি চক্রবর্তী
কাজ করতে করতে অন্যের খবর এসে পৌঁছায় না, সিসিফাসের অঞ্চলে। এখানে কোনো সংবাদ মাধ্যম তো দূর অস্ত তেমন কোনো খবরবাহকও নেই তার। এতোদিন ধরে গোটা বিশ্বের নাট্যের সঙ্গে জড়িত মানুষদের কাছে মিথ হওয়া সত্ত্বেও কোনো খবর বাহক রাখতে পারেননি তিনি। এ বড় আজব ব্যাপার। সেদিন আকস্মিক এক নব্য চ্যানেলের তালেবর গোছের কর্তা পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত নিলেন সেই অক্লান্ত বৃদ্ধের ডেরায়।
ট্রেকিং এর সু থেকে শুরু করে, ছোট অক্সিজেন সিলিন্ডার, ড্রাই ফুড নিয়ে অকুতোভয় দুই রিপোর্টার রওনা দিলেন সিসিফাসের ডেরার দিকে। আলো পড়ে আসছে তখন, সূর্য তার স্বর্ণছটায় দিগন্তের শেয়ার বাজারে হিল্লোল তুলে দিয়েছে… এই সময় এই অক্লান্ত বৃদ্ধ একলা দাঁড়িয়ে দেখছিলেন, বলা ভাল গুনছিলেন যে কতো পাথর সরানো বাকি আছে তার? এ কাজ কি আদৌ শেষ হবে? এসব ভাবতে ভাবতেই সেই রিপোর্টারদের বুম এগিয়ে এলো তার সামনে, তিনি তো জানেনই না এসবের মানে।
ক্যামেরাম্যান সব রেডি করে, বুড়ো আঙুল দেখাতেই মেয়েটির অনর্গল চীৎকারে এই পাহাড়ের নৈঃশব্দ খানখান হয়ে গেল।
মেয়েটি — আমরা এখন এসে পৌঁছে গেছি, নাট্যের সেই প্রাচীন, জীবন্ত এবং একমাত্র কিংবদন্তি সিসিফাসের কাছে। নমস্কার সিসিফাসবাবু। আপনি কেমন আছেন?
— সিসিফাস ফ্যালফ্যাল করে আকাশের দিকে চেয়ে থাকেন।
– চারিদিকে নাট্যের পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনি ওয়াকিবহাল তো?
— সিসিফাস পাথরখন্ডের দিকে এগিয়ে চলে ধীরে ধীরে।
— (ক্যামেরাম্যান বলেন) এই শালা পাথর ছুঁড়ে মারবে নাকি?
— সিসিফাস নির্বিকারভাবে এগিয়ে চলেন —
মেয়েটি- বুঝতেই পারছেন, উনি ওনার কাজের ব্যাপারে এতো মশগুল যে কোনো কথার উত্তর দেবার প্রয়োজনই মনে করছেন না — সিসিফাসবাবু, হ্যালো। শুধু এটুকু বলুন যে আপনি এই প্রথম কোনো লাইভ ক্যামেরার মুখোমুখি হলেন।
– সিসিফাস পাথর তুলে এগোতে থাকেন, এবারে মেয়েটির চোখেও যেন ভয় পুরনো বাড়ির অন্ধকারের মতো প্রসারিত হয়ে আসে। ক্যামেরাম্যান পালাতে শুরু করে, মেয়েটি এখনো অপেক্ষামান। গলা আরো তুলে চেঁচিয়ে বলতে থাকেন —
এই জন্যই শালা আপনার কাছে কেউ আসেনা। বৃদ্ধ অহংকারী উন্মাদ। পাথর ছাড়া কিছু বোঝেনা। সারাদিন পাথর পাথর পাথর …, পাগল …
সিসিফাস মেয়েটির কাছে এসে গেছেন এতোক্ষণে। পাথরটি মেয়েটির কাছে দিয়ে বলে —
আপনি কে জানিনা, শুধু জানি লক্ষ্যে অবিচল থাকা ছাড়া আমার জীবনে আর কিছু করার নেই। প্রতিটি পাথরে এই কথাই লেখা আছে। আপনার চোখ থাকলে দেখবেন, বাকিদেরও দেখাবেন। একটা সংবাদ মাধ্যমের এই কাজ। আমি সবকিছু থেকে দূরে থাকলেও এইটুকু জানি।
মেয়েটি আনন্দে চীৎকার করে ওঠে। সিসিফাস পাথর নিয়ে তখন অনেক দূরে হেঁটে চলে গেছেন।
মেয়েটি রেকর্ডেড অংশটি শুনতে চায়, দ্যাখে রেকর্ড বাটনটাই অন করা হয়নি।
ডাকতে থাকেন সিসিফাসকে। সেই ডাক পাহাড়ে প্রতিধ্বনি হয় —
— ও সিসিফাসবাবু আরেকবার বলবেন আপনার কথাগুলো?
— দৈববানিরা ভেসে আসে। ‘ থিয়েটারে কোনো রি- টেক হয়না…
হয়না …
হয়না … ‘