তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। রাখালদার ক্যান্টিন, পুঁটিরামের দোতলায় আর ইউনিয়ন রুমে বসে আসন্ন বিপ্লব নিয়ে চায়ের ধোঁয়ায় তুফান তুলছি। নীট্শের মত বিপ্লবের বোমা বানিয়ে গিলছি। আমাদের সেই আলোচনার ফাঁকে একদিন ঢুকে পড়লেন উৎপল দত্ত। ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে তাঁরই অনুবাদিত ব্রেখটের ‘ডি মাসনামে’ নাটকটি তখন নিয়মিত অভিনয় করছি। সেই আলোচনার বিষয় ছিল, এমন সব নাটক যাঁর ভাবনা চিন্তায় সেই লোকটির হিন্দী ফিল্মে এমন ভাঁড়ামো করে বেড়ানোটা অনুচিত, অশোভন। সেই বয়সের উন্মাদনায় কত যে বোকা বোকা মন্তব্য করে ফেলতাম আমরা, আজ ভাবলে বেশ লজ্জিত হই। তখন ওর এক আত্মীয়র কন্যা আমাদের সঙ্গে পড়তো আর প্রেসিডেন্সিতে পড়তো বিষ্ণুপ্রিয়া , মানে উৎপল দত্তের একমাত্র কন্যা। আত্মীয়ার সামনে যদিও বা মুখ খুলতাম বিষ্ণুপ্রিয়ার সামনে মানবিক কারণেই ঐ অনর্থক কাজটি কেউ করতাম না; তবে আড়ালে অবশ্যই বলতাম, বাবা করেন হিন্দী সিনেমায় ভিলেনী নচেৎ ভাঁড়ামী। এত ভাঁটের কি আছে? অথচ মনে পড়ে না ও কখনো ডাঁট মেরে কথা বলেছে। ওটা নিছকই আমাদের কল্পনাপ্রসূত ভাবনা এবং নিছক গল্পো।
এই যে একটা ব্যক্তিগত ভূমিকা করলাম, তা নিজের স্মৃতিচারণের বাসনাতে নয়। যে ভুলটা ওই সময় আমি এবং আমরা বন্ধুরা করেছিলাম। সেই ভুল মূল্যায়ণ একটা সাধারণ ট্রেন্ড হিসাবেই ছিল। একদিকে বিপ্লবী রাজনৈতিক নাটক অন্যদিকে হিন্দী-বাংলা সিনেমার ঐ সব চরিত্রাভিনয়কে আমরা মেনে নিতে পারছিলাম না। দুটোকে মিলিয়ে একটা মানুষের পজিটিভ মূল্যায়ন করবার মত বুদ্ধি-চোখ-শিক্ষা কোনটাই আমাদের ছিল না। সেই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক দাদারা বিপ্লবের বড়ি চিবিয়ে খাওয়াতে যত ব্যস্ত থাকতেন, ততটাই অপারগ ছিলেন উদার একটা চোখ এবং মনকে গড়ে তুলতে। কেন একটা মানুষ এত কৃচ্ছসাধনা করে, নিশ্চিন্তে চাকরির লোভ ছেড়ে, জেল খেটে, সহকর্মীদের কাছে অবিশ্বাসী হয়েও রাজনৈতিক থিয়েটারকে আঁকড়ে ধরে থাকেন, কোন শক্তিতে? সেই বিচার এখনও করিনি আমরা। উৎপল দত্তের রাজনৈতিক থিয়েটার নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে এবং হবে। কিন্তু নানা বৈপরীত্যের মাঝখানে অবিচল থাকার কোন সূত্রানুসন্ধান এখনো হয়নি। জানি শিল্পের এই জটিল রন্ধনশালায় সূত্র খোঁজা মুশকিল কিন্তু খোঁজাটা তো জরুরী।
একটা মানুষ যদি জীবনের শেষ পনেরো-বিশ বছর একটু স্বাচ্ছন্দ্য পেতে চান, সেটা কি অন্যায়? আমাদের দেশে থিয়েটার করে স্বাচ্ছন্দ্য জোটে কি? তাছাড়া মুম্বাই-চেন্নাইয়ে উৎপল দত্তের মত আর ক’জন অভিনেতা বাংলা থেকে গিয়ে অমন জাঁকিয়ে বসতে পেরেছিলেন? অনেকেই চেষ্টা করেছেন, পারেননি তাঁরা। উৎপল দত্ত তাঁর প্রতিভার জোরে সেটা পেরেছিলেন। শুধু অভিনয় নয়, কী অসম্ভব শ্রদ্ধা আর সমীহ ছিল সমস্ত ইণ্ডাষ্ট্রির তার কিছুটা প্রত্যক্ষদর্শী আমি নিজেই। কিন্তু একদিনের জন্যও ব্যক্তিগতভাবে সিনেমাকে প্রাধান্য দেননি তিনি। দীর্ঘ সময়ের মধ্যে কদাচিৎ তাঁর মুখে শুনেছি সিনেমা সম্পর্কিত আলোচনা। যতটুকু শুনেছি তার অধিকাংশই ছিল হাসি ঠাট্টায় ভরা, বিশেষত হিন্দী জগতের। তবে ওখানকার পেশাদারিত্বকে অসম্ভব শ্রদ্ধা করতেন। তুলনায় বাংলা সিনেমা জগতের পেশাদারি মনোভাব নিয়ে তাঁর অনেক প্রশ্ন ছিল। সিনেমার কাজ তাঁর কাছে অশ্রদ্ধেয় ছিল সেটা বলা ঠিক নয় কিন্তু থিয়েটার আর রাজনীতির আবেগের কাছে তা নিতান্তই তুচ্ছ। পেশা হিসেবে শেষ জীবনে সিনেমাকে গুরুত্ব দিলেও তার পিছনে একটু নিশ্চিন্ত জীবনের বাসনা যেমন ছিল তেমনই ওই পয়সায় আজীবন থিয়েটার করে যাবার নিশ্চয়তার গ্যারান্টিও জোগাড় করে রাখছিলেন।
জীবনের সবচেয়ে ফলপ্রসু সময়ে অর্থের দুশ্চিন্তায় জর্জরিত হতে হয়েছিল তাকে। হয়তো আজকের এই উৎপল দত্তের অবদান এভাবে নাও থাকতে পারতো, যদি শোভা সেনের মত নেপথ্যচারিনীকে তিনি না পেতেন। সব ঝঞ্ঝা থেকে আড়াল করে উৎপল দত্তকে কাজ করতে দেবার যে সুযোগ প্রতিদিন প্রতিক্ষণে করে দেবার জন্য সতত সচেষ্ট থাকতেন, তার কোন মূল্যায়ন পাননি শোভা সেন। তাঁর অভিনেতা অবদানের বাইরে এই অবদান কম ঐশ্বর্য্যমন্ডিত নয়। শোভা সেন নিশ্চয়ই জোর করেননি উৎপল দত্তকে যে তাঁকে সিনেমা করতেই হবে! আসলে দু’জনেই বোধহয় চেয়েছিলেন সুস্থ একটা জীবন। সিনেমার পয়সায় বঞ্চনামুক্ত জীবন চাওয়াটায় অন্যায় কোথায়?
তাছাড়া আজ এমনও তো মনে হয়, সিনেমায় না এলে কত অবিস্মরণীয় চরিত্রকে হারাতো একটা শিল্প মাধ্যম!
একজন প্রথিতযশা পরিচালক যথার্থই বলেছিলেন, এতগুলো ভাষায় দক্ষ এবং সুপণ্ডিত এমন অভিনেতা পৃথিবীতে আর ক’জন আছেন? তাঁর সব সিনেমা বাদ দিয়ে যদি ‘আগন্তুক’ ছবিটি নিয়েই আজ থেকে পঞ্চাশ বছর বাদে কেউ চুলেচেরা বিশ্লেষণ করতে বসেন, তাকে বিস্মিত হতে হবেই! কি বিস্ময়কর সেই অভিনয়! তাঁর সেই চরিত্রে অভিনয় করবার সময় আমি এক অসামান্য অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলাম। একদিন খুব সকালে ‘কল্লোলে’ গিয়েছি। দোতলার ঘরে উঠে দেখি তিনি কতগুলি প্রাণায়াম করছেন। মাসিমা ইশারায় চুপ করে বসতে বললেন। অনেকক্ষণ পর চা খেতে খেতে জিজ্ঞাসাও করলাম মাসিমাকে, এগুলো কেন করছেন! জানলাম, আগন্তুকের দীর্ঘ সংলাপ বলতে হবে কিন্তু দমের ঘাটতি হচ্ছে। তাই রোজ সকালে আসন এবং প্রাণায়াম করেন। হাসতে হাসতে খোদ অভিনেতাকেই জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনার এখনও এসব করতে হয়? তখন প্রায় মন্ত্রের মতই বললেন– ‘অভিনেতাকে আজীবন শিখতে হয়, তৈরি হতে হয়’। সত্যিই তো তাই। একথা তো নানাজন নানাভাবে শুনেছেন কিন্তু আমি একজনকে দেখলাম, যিনি আজন্ম নিজেকে গড়েছেন। গড়তে গড়তে নিঃশেষ হয়েছেন। তাঁর সিনেমায় অভিনয় নিয়ে আজও যারা সমালোচনা করেন তাদের সঙ্গে কিছুতেই একমত হতে পারি না। একজন জাত অভিনেতা তিনি চাইবেন না অভিনয়ের সমস্ত মাধ্যমে নিজেকে প্রমাণ করতে? এখন মনে হয় যারা পারেননি এবং যারা ওই মাধ্যমে কাজ করতে চান অথচ সুযোগ পাননি তারা ওই কথা বলেন। অক্ষমের বিলাপ বলে মনে হয়।
আরও একটা অভিযোগ শুনি, সিনেমায় কাজ করার ফলে নাট্যজগৎ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, ব্যক্তিগতভাবে আমার অন্তত সেকথা মনে হয়নি। একটা ঘটনার কথা বলি। তখন ‘মালো পাড়ার মা’ নাটকটি চলছিল। একবার মালদা-মুর্শিদাবাদে টানা দু-তিন দিন অভিনয় করে সারা রাত বাসে চেপে কলকাতায় ফিরে ওই দিন সকালের ফ্লাইটে গেলেন চেন্নাই। অন্যরা তখন বাড়িতে ঘুমচ্ছে অথচ উৎপল দত্ত সেখানেও দু-তিনদিন টানা দুই-তিন শিফট করে শুটিং করবার পর আবার কলকাতায় শোয়ের দিন দুপুরে ফিরে এসেছেন। অথচ আমরা সকলে জানি, হলে ‘প্লে’ থাকলে ( উৎপল দত্ত ‘প্লে’ শব্দটি ব্যবহার করতেন) প্রায় তিন ঘন্টা আগে হলে হাজির হতেন। এমনই তার থিয়েটারের প্রতি কমিটমেন্ট। তাঁর সম্পর্কে তাই দুম করে এ ধরণের একটা অভিযোগ তোলার আগে পাঁচবার ভাবা উচিত? সময় কমে গিয়েছিল একথাটা ঠিকই আর সময়কে চ্যালেঞ্জ জানাতে গিয়ে শরীরকে নষ্ট করেছিলেন এমন কথা বললে মেনে নেওয়া যায় কিন্তু নাটকের ক্ষতিসাধন করবার মানুষ তিনি নন। জানিনা আর কিভাবে তাঁর দায়বদ্ধতার প্রমাণ দেবার প্রয়োজন ছিল।
একটা নাটক লেখার আগে দীর্ঘ প্রস্তুতি নিতেন। যতক্ষণ না নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করতেন, ততক্ষণ নাটক লেখায় হাত দিতেন না। নাটক লেখার আগের সময়গুলি একটুও নষ্ট করতে চাইতেন না। শুটিং করতে যাবার সময় পাঠ মুখস্থ করতে দেখিনি, দেখেছি নানা বিষয়ের দুষ্প্রাপ্য সব বই হাতে নিয়ে স্টুডিওতে ঢুকতে। মেকআপ করতে যাবার আগে বই, ক্যামেরার সামনে দাঁড়াবার আগে এবং পরেও বই নিয়েই তিনি থাকতেন। এত কোলাহল, এত কিছুর মধ্যে ধ্যাণীর মত বসে থাকতেন তিনি। মাঝে মাঝে প্রখর স্মরণ শক্তির যে নমুনা পেয়েছি তাতে বিস্মিত হবেন যে কোন মানুষ। একটা ঘটনার কথা বলি, বিষ্ণুপ্রিয়া সদ্য বিদেশ থেকে ফিরেছে; সম্ভবত ‘ইনভিজিবিল থিয়েটার’ নিয়েই কোন একটা কথা হচ্ছিল। আমি বিস্তৃতভাবে জানতে ইচ্ছুক হওয়ায় ও আমাকে বলল– বাবার কাছে জিজ্ঞেস করো সব বুঝিয়ে দেবে। বাবা কিন্তু দারুণ টিচার। একদিন তিন তলার লাইব্রেরির সামনের ব্যালকনিতে একাকী মেসোমশাইকে পেয়ে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করে বসলাম ‘ইনভিজিবল থিয়েটার’ নিয়ে। কয়েকটি মাত্র কথা বললেন। সেকথায় সংজ্ঞা ছিল না বরং ছিল আমার জিজ্ঞাসাকে আরও উসকে দেবার মত কথা। তারপর বললেন, বইয়ের আলমারির ঐ দিকটাই একটা বই আছে। ওটা বের করে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি পাতা উল্লেখ করে বলেছিলেন, ঐ পাতাগুলি পড়ে নাও। বইটি ছিল, অগাস্ত বোয়ালের ‘টুওয়ার্ডস এ রেভলিউশনারি থিয়েটার’, মনে রাখতে হবে তখনও কলকাতা বোয়ালকে চিনে উঠতেই পারেনি। ওভাবেই আমাকে পড়িয়েছিলেন মাই লং ফাঙ এর বই, পিটার ব্রুকের বই। কখনোই কোন জিজ্ঞাসার সমাধান করে দেননি, জিজ্ঞাসাকে বরং উসকে দিয়ে হদিশ বলে দিতেন কোথায় নিবিষ্ট হতে হবে। একেবারে সুনির্দিষ্ট ভাবে। এটাই ছিল তাঁর বিশিষ্টতা। অন্তত আমি শেষ বয়সের যেটুকু সময়ে তাঁকে দেখেছি সেই দেখার অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি। পরিচালনার ক্ষেত্রেও দেখেছি অভিনেতাকে সুনির্দিষ্ট ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়া বা সংলাপের একটি দুটি শব্দের বলার প্যাটার্নকে ধরিয়ে দিতেন। তাতেই চরিত্রটি অন্য একটা মাত্রা পেয়ে যেত। তাঁর পরিচালনা সম্পর্কে অনেক লেখা, অনেক গল্প প্রচলিত আছে কিন্তু এই অনন্য পন্থাটির কথা কোথাও পাইনি। একটি নাটকের পুরো রিহার্সাল হয়ে যাবার পর, প্রত্যেক অভিনেতার সুনির্দিষ্ট ত্রুটি বা সংলাপ বলার প্যাটার্নকে উল্লেখ করে ধরিয়ে দেওয়া এবং অভিনেতাকে উন্নীত করবার পথ বাতলে দেওয়া যে কত কঠিন কাজ তা সাধারণের পক্ষে বোঝা মুশকিল। আমরা বিস্মিত হতে পারি মাত্র অনুকরণ করতে অপারগ। ওখানেই আমরা খর্বকায় বামন হয়ে যাই।
তাই সিনেমা তাঁর থিয়েটারকে খর্ব করেছে একথার সবটা ঠিক নয়। কিছুটা ঠিক হয়তো কিন্তু সেই ক্ষতি মেনে নিতেই হবে শিল্পীর অন্য মাধ্যমে কাজের বাসনার নিরিখে, মানুষের একটু স্বচ্ছল হবার নিহিত সদর্থক চাওয়াকে স্বীকৃতি দিয়ে,সেই সঙ্গে থিয়েটারকে অর্থের জন্য কৃপণ না করে তোলবার ইচ্ছে হিসেবে। তবুও তো এটা ঠিক তার শেষতম কিছু প্রযোজনা আর ভালো লাগছিল না আমাদের। শেষ একদশক প্রায় অতৃপ্ত রেখেছেন তিনি। রাজনৈতিক কমিটমেন্ট যেন বড় হয়ে উঠছিল তাঁর থিয়েটার কমিটমেন্টের চেয়ে। তাই ‘অগ্নিশয্যা’, ‘নীল সাদা লাল’ বা ‘একলা চলো রে’ আর আমাদের মনে কোন রেখাপাত করে না। আসলে সময়ের হাত ধরে প্রতিভা তখন অস্তমিত। তাই সিনেমাকে গাল পেড়ে লাভ নেই। যে তিনটি নাটকের উল্লেখ করলাম এগুলি ছাড়াও আরও অনেক নাটক আছে সেগুলি পড়লেই বোঝা যাবে থিয়েটারের প্রতি কমিটমেন্টের কোন অভাব নেই, অভাব তাঁর থিয়েটারের প্রতিভার প্রচন্ডতার। কল্লোল, অঙ্গার, মানুষের অধিকারের সেই যাদুস্পর্শ ছিল না শেষের দিকের প্রযোজনাগুলিতে।
সবচেয়ে মজার কথা, তিনি নিজেও বোধহয় তা বুঝতেন। কতবার শুনেছি, কালের হাতে বোধহয় একটাও থাকবে না! নাকি দু-এক পিস থাকবে! –মজা করে বলতেন। কিন্তু কোথাও যেন সত্যিটাও আছে। আসলে মজার মত শুনতে লাগলেও শিল্পীর অন্তঃস্থিত ট্র্যাজেডির কথা–যা নিজেই বলতেন নিজেকে ব্যঙ্গ করে। কেমন যেন মনে হয়, থিয়েটারকে যতখনই স্পষ্ট করতে পারেন নি তখনই রাজনৈতিক কমিটমেন্ট আঁকড়ে ধরেছেন। আজীবন যে বিশ্বাস নিয়ে থিয়েটার করলেন সেই বিশ্বাসেও ফাটল ধরতে দেখলেন শেষ বয়সে। কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের পতনে যে কি পরিমাণে বিচলিত হয়েছিলেন তাও দেখেছি প্রতিনিয়ত। তখন সকালবেলার প্রতিদিনের আড্ডার বিষয় ছিল ওই পতনের হাহাকার। নিত্যসঙ্গী চিত্তদার (অনল গুপ্ত) সংগে ওই বিষয়েই কথা বলতে দেখতাম। তাই আমরা সকলে যখন চাইছিলাম, আপনার আত্মজীবনীটা লিখুন। সকলকে সমূলে ধূলিস্যাৎ করে বলতেন, আগে প্রতিবিপ্লব, তারপর আত্মজীবনী। রাশিয়ার পতন নিয়ে যখন সকলেই দিশেহারা, রাজনৈতিক নেতারাও বুঝতে পারছিলেন না, কিভাবে ব্যাখ্যা দেবেন এসবের। তখনই সবার হাতে শিল্পী উৎপল দত্ত তুলে দিলেন ‘প্রতিবিপ্লব’ বইটি কমিউনিজমের প্রতি বিশ্বাসী মানুষের ‘যুক্তির আলো’ যেন একটু একটু করে দেখতে পেল ওই বইটি পড়ো কিন্তু থিয়েটারের আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হলাম তাঁর আত্মজীবনীটি না পেয়ে। সত্যিই এ এক বিরাট ক্ষতি। ক্ষতি আমার নিজেরও। রোজদিন যখন ‘কল্লোল’ থেকে ফিরতাম তখন মজা করে রোজই বললেন, ‘আশিস আবার আসিস’!
এখন আর কোন বিজয়ার প্রণামে আর কেউ বলবে না বুকে জড়িয়ে ‘লাল সেলাম, লাল সেলাম’, একথা বলতেন আমার এক প্রিয়জন–যাঁর নাম উৎপল দত্ত।
আশিস গোস্বামী